ওসির 'গালমন্দের' জেরে পরিবহনশ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে গালমন্দ করার অভিযোগ এনে সড়ক অবরোধ করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। বাসচালক ও শ্রমিকদের ওই অবরোধের কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কে অন্তত ৩০ মিনিট যান চলাচল বন্ধ ছিল।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে সাতটা পর্যন্ত পরিবহনশ্রমিকেরা সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করেন। এতে ওই দুই সড়কে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। পরে ভৈরব থানা-পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য ‘দুর্জয় ভৈরব’–এর এক পাশ দিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক গেছে। ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কটি গেছে ভাস্কর্যের আরেক পাশ দিয়ে। ভাস্কর্যের চারপাশে যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানোর কারণে প্রায় সময় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। সমস্যার প্রতিকার পেতে প্রশাসনের সিদ্ধান্তমতে, কাছাকাছি স্থানে যানবাহন থামার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
গতকাল ভৈরব-ময়মনসিংহের মধ্যে চলাচলকারী শ্যামল ছায়া পরিবহনের একাধিক বাস দাঁড়িয়ে ছিল। ভৈরব হাইওয়ে থানার ওসি মামুনুর রহমান এসে বাস সরিয়ে নিতে বলেন। এই নিয়ে বাসচালকদের সঙ্গে ওসির বাগবিতণ্ডা হয়। এর জের ধরে পরিবহনশ্রমিকেরা এক হয়ে সন্ধ্যায় অবরোধ সৃষ্টি করেন।

তবে পরিবহনশ্রমিকদের অভিযোগ, গতকাল হাইওয়ে থানার পুলিশ সুপার সড়ক দিয়ে যাবেন বলে হাইওয়ে পুলিশ সড়কে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে। কোথাও একটি গাড়ি থামালেই অকথ্য ভাষায় গালমন্দ শুরু করে। বিশেষ করে বেলা তিনটার দিকে ওসি নিজে এসে শ্যামল ছায়া পরিবহনের চালক, মালিক ও শ্রমিকদের উদ্দেশ করে গালমন্দ শুরু করেন। প্রতিবাদ করতে গেলে ক্ষুব্ধ হয়ে আরও অশোভন আচরণ করেন। এ কারণে সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে প্রতিবাদ জানানো হয়। অবরোধের সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা ওসির অপসারণ দাবি করেন।

জানতে চাইলে ওসি জানান, বাসস্ট্যান্ড এলাকা যানজটমুক্ত রাখতে করণীয় সম্পর্কে বাসস্ট্যান্ডে সভা হয়েছে। সভায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সায়দুল্লাহ মিয়া ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুবনা ফারজানা উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে জায়গাটি যানজটমুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ বাস্তবায়নে আমাকে তাগিদ দেওয়া হয়। আমিও চেষ্টা করছি সবকিছু ঠিক রাখতে। এখন আমার উদ্যোগ বাসচালক ও মালিকপক্ষের পছন্দ নয়।’

গতকালের ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে ওসি বলেন, ‘শ্যামল ছায়া পরিবহনের দুটি বাস পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে রাখার কারণে সড়কে বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। এ বিষয়ে শ্যামল ছায়া পরিবহনের চালকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। কিন্তু তাঁরা আমার কথা শোনেননি। তখন তাঁদের সঙ্গে আমার কথা-কাটাকাটি হয়।’

ভৈরব বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ‘দুর্জয় ভৈরব’ এলাকায় যানজট সৃষ্টির বিষয়ে তাঁদের কোনো ভূমিকা নেই। কারণ, ভৈরব বাস মালিক সমিতির অধীনে কেবল শ্যামল ছায়া পরিবহনের বাস রয়েছে। অথচ এই সড়ক দিয়ে অন্যান্য পরিবহনের হিসাব ছাড়া যানবাহন চলে এবং তাদের কাউন্টার রয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ সামান্য কারণে পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে মন্দ আচরণ করায় শ্রমিকদের মনে কষ্ট জন্মে। সেই কষ্ট থেকেই অবরোধ সৃষ্টি করেন শ্রমিকেরা।