বিমা খাতকে প্রযুক্তিনির্ভর করতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় বীমা দিবস’ এর উদ্বোধন শেষে বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। ঢাকা, ১ মার্চ। ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় বীমা দিবস’ এর উদ্বোধন শেষে বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। ঢাকা, ১ মার্চ। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুঃসময়ে বিমা থাকার বিভিন্ন সুবিধা সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার পাশাপাশি আধুনিক তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিমা সংস্থাগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত এবং এর পরিষেবা আরও উন্নত করতে বিমা কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিমার যেকোনো কিছু অর্থাৎ বিমার দাবি নিষ্পত্তি থেকে শুরু করে বিমা সেবাকে আরও সহজীকরণে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য। এটা করলে দুর্নীতি দূর হবে। এর থেকে মানুষ উপকার পাবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রথম জাতীয় বিমা দিবসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকেরই ইনস্যুরেন্সটা করা থাকলে তাদের যে সুবিধাটা হয়, সেটা একটু দেখা দরকার এবং এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিটা এখন কার্যকর করা দরকার।

বিমা কোম্পানিগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশে এটা হয়ে গেছে, সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি, আমাদের দেশেও পুরো বিমা পদ্ধতিটাকে আপনারা ডিজিটাল সিস্টেমে দাঁড় করাবেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বলব, বিমাটাকে আপনারা আরও মানুষের কাছে নিয়ে যান। এখন আমাদের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মানুষ কিন্তু অনেক বেশি সচেতন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সব বিমা প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশন পদ্ধতির আওতায় নিয়ে এলে বিমা খাতের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে অধিকাংশ সমস্যার সমাধান হবে এবং কেউ ফাঁকি দিতে পারবে না। ফলে বিমার গ্রাহকদেরও আস্থা এবং বিশ্বাস বাড়বে। বিমা খাতের প্রিমিয়ামসহ দেশের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।

‘এ ছাড়া বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিমা গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণে “স্টেট-অব-দি-আর্ট টেকনোলজি”–সম্পন্ন “ইউনিফায়েড মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম” (ইউএমপি) পদ্ধতি চালু করেছে, যা গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’ এ কথা উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বিমা খাতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পাঁচজনের মধ্যে ‘বিমা পদক’ বিতরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটির (আইডিআরএ) ‘বিমা ম্যানুয়েল’ এবং ‘বিমা নির্দেশিকা’ নামে দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
দেশের বিমা খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গাড়ি যারা ব্যবহার করে, তাদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় গাড়ির ইনস্যুরেন্সটা সঠিকভাবে করে নিই। থার্ড পার্টি ইনস্যুরেন্স, সামান্য কিছু টাকা দিলেই সার্টিফিকেটটা পেয়ে যায় এবং গাড়ি চালাতে পারে। কিন্তু যখন দুর্ঘটনা ঘটে, তখন কিন্তু আর কিছুই পায় না।’

শেখ হাসিনা বলেন, কারও গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে সে যে টাকা পেতে পারে বা ইনস্যুরেন্সের টাকায় গাড়ি মেরামত করাতে পারে, সে বিষয়টি মানুষকে আরও ব্যাপকভাবে জানানো দরকার। তিনি তাঁর নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘কেউ যদি আপনাকে পেছন থেকে ধাক্কা মারে, তাহলে তার ইনস্যুরেন্স থেকেই আপনার জরিমানার টাকা পাওয়া দরকার। যদিও এই সিস্টেমটা আমাদের দেশে এখনো শক্তিশালীভাবে গড়ে ওঠেনি। আমি মনে করি, এটা গড়ে ওঠা দরকার।’

তিনি বিমা কোম্পানির উদ্দেশে বলেন, বিমা করলে মানুষ যে সুবিধাগুলো পাবে, সেগুলো মানুষের কাছে আরও ব্যাপকভাবে প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের কৃষকদের জন্য কৃষিবিমা, স্বাস্থ্যবিমা, রেলযাত্রীদের জন্য বিমা, এমনকি ভবনের জন্য বিমা করার উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শিশুদের লেখাপড়া চালানো এবং সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিতের জন্য শিশুর জন্মের পরপরই তাদের নামে একটি করে বিমা এবং পোশাকশ্রমিকদের জন্যও বিমা করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমামালিকদের প্রস্তাবিত ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা’ চালুর বিষয়টি তাঁর সরকার পরিকল্পনায় রেখেছে।

শেখ হাসিনা বিমা কোম্পানির উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের যাঁরা পর্যবেক্ষক হবেন বা ঘটনার ইন্সপেকশনে যাঁরা যাবেন, তাঁদের ভালো ট্রেনিংপ্রাপ্ত এবং সৎ লোক হতে হবে।’

তিনি বলেন, গ্রাহকেরা বিমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামটা যাতে সঠিকভাবে দেন, সেটাও যেমন প্রয়োজন, বিমার টাকা যেন পায় এবং সঠিকভাবে পায়, সেটা নিশ্চিত করাটাও জরুরি। যতটুকু ক্ষতি, ততটুকুই যেন ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। ফাঁকি দিয়ে নেওয়ার প্রবণতাটাও দূর করতে হবে।

দেশের বেকার সমস্যা অনেকাংশেই লাঘব হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিমা কোম্পানির মালিক যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা যদি এজেন্ট হিসেবে কাজ দেন, তাহলে অনেক যুবক এবং বিশেষ করে মেয়েরা কাজ করতে পারে। ফলে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং বেকারত্ব দূর হবে।