চট্টগ্রামে আ.লীগের রেজাউল, বিএনপির শাহাদাত পাশাপাশি বসলেন, কথা বললেন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএনপির শাহাদাত হোসেন, জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠ ও ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী আল্লামা এম এ মতিনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে। ছবি: প্রথম আলো
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএনপির শাহাদাত হোসেন, জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠ ও ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী আল্লামা এম এ মতিনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে। ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় দেখা হলো আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের। দুজনই বসেছিলেন পাশাপাশি। কথা বলেছেন হাসিমুখে। সঙ্গে ছিলেন অন্য মেয়র প্রার্থীরাও। অবশ্য দুজন আলাদাভাবে শিল্পকলা প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।

আজ রোববার সকালে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের প্রার্থীদের মনোনয়ন বাছাই হয়। কার্যক্রম পরিচালনা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান।

মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, স্বতন্ত্র দুই মেয়র প্রার্থী ও ৯ সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। কাউন্সিলরদের একজন বিএনপি–সমর্থিত। তবে ৫৮ সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর কারও মনোনয়নপত্র বাতিল হয়নি। তাঁদের অধিকাংশেরই মনোনয়ন বাতিল হয়েছে ঋণখেলাপের কারণে।

পাশাপাশি বসলেন তাঁরা
আজ সকালে শুরুতেই মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এ সময় সামনের সারিতে রাখা আসনে মেয়র প্রার্থীরা বসেন। বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের বাঁ পাশে বসে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও ডান পাশে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বসেছিলেন। একই সারিতে নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম, অন্য মেয়র প্রার্থী ও দুই দলের শীর্ষ নেতারাও ছিলেন।

জানতে চাইলে খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, দুই মেয়র প্রার্থীর মধ্যে সৌজন্যমূলক কথা হয়েছে। দুজন কুশল বিনিময় করেছেন। খুবই আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ছিল।

জানতে চাইলে বিএনপি প্রার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, সৌজন্যমূলক পরিবেশে দুজনের কথা হয়েছে। কুশল বিনিময় করেছেন তাঁরা।

নির্বাচন উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনগণ ভোট দিতে আসুক। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হোক। পেশি শক্তির যাতে ব্যবহার না হয়। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হোক, তা আমরা সবাই চাই। এখন আমরা দুই প্রার্থী যদি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে কথা না বলি, তাহলে মানুষ কী মনে করবে?’

যে কারণে দুই মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী খোকন চৌধুরী ও তানজীর আবেদীনের মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে তা বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান। তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ৩০০ ভোটারের স্বাক্ষরের একটি তালিকা জমা দিতে হয়। কিন্তু তাঁদের দুজনের তালিকা ত্রুটিপূর্ণ। নির্বাচন কমিশন দৈবচয়নের ভিত্তিতে পাঁচজন করে ভোটার নির্ধারণ করে। কিন্তু সরেজমিন কয়েকজনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রলোভনের মাধ্যমে একজনের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। এ কারণে দুই মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। তবে তাঁরা চাইলে আবেদন করতে পারবেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেনসহ বাকি সাতজনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়। অন্য পাঁচ প্রার্থী হলেন ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের মো. জান্নাতুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির মো. সোলায়মান আলম শেঠ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনজুর ও ইসলামিক ফ্রন্টের মুহাম্মদ ওয়াহেদ।

ঋণখেলাপের দায়ে বাদ
এবারের নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে ২২০ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে ২১১ জনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়। বাদ পড়া ৯ জনের মধ্যে ৮ জনেরই মনোনয়ন বাতিল হয়েছে ঋণখেলাপের দায়ে।

ঋণখেলাপের কারণে বাদ পড়েছেন ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডের মো. সাইফুল্লাহ খান, ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলোশহরের মোহাম্মদ সোহেল মাহমুদ, ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়ার মো. আবদুল মান্নান ও মহিউদ্দিন মাহমুদ, ২০ নম্বর দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডে বিএনপি–সমর্থিত হাফিজুল ইসলাম, ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লার হাবিব উল্লাহ ও ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের মো. হাসান মুন্না। আর ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আকবরের মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষরকারী অন্য ওয়ার্ডের হওয়ায় তাঁর মনোনয়ন বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, মনোনয়ন বাতিলের ব্যাপারে কোনো প্রার্থীর আপত্তি থাকলে তাঁরা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে তিন দিনের মধ্যে আবেদন করতে পারবেন।

ছোটখাটো ভুল ‘মাফ’
৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. ইউসুফ মনোনয়নপত্রের সব কাগজপত্র জমা দিলেও নিজের স্বাক্ষরই দেননি। মুঠোফোনের নম্বরও দিয়েছেন ভুল। তবে তা আমলে নেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান। অন্য প্রার্থীদের সম্মতির ভিত্তিতে মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেন তিনি।

৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. সাইফুল আলম চৌধুরী চেক প্রতারণার মামলায় এক বছরের সাজা পেয়েছেন বলে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত করেন উপস্থিত এক পুলিশ কর্মকর্তা। তবে আইন অনুযায়ী ন্যূনতম দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত না হওয়ায় তাঁর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়।

গতকালের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় ব্যাংকের প্রতিনিধি কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, এই প্রার্থীরা বিভিন্নজনের নেওয়া ঋণের বিপরীতে জামানতকারী ছিলেন। এসব ঋণখেলাপ হয়ে গেছে। তবে এসব অভিযোগের বিপরীতে রিটার্নিং কর্মকর্তা জানতে চান, ঋণখেলাপের বিষয়ে জামানতকারীদের কোনো নোটিশ দেওয়া হয়েছে কি না। এ ধরনের কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি বলে জানান ব্যাংকের প্রতিনিধি। এরপর এ ধরনের অভিযোগ বাতিল করে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেন।