নোয়াখালীতে শিবিরের হামলায় ছাত্রলীগ নেতা নিহত, গ্রেপ্তার ৫

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আমানউল্যাপুর বাজারে ছাত্রশিবিরের স্থানীয় কর্মীদের সশস্ত্র হামলায় ছাত্রলীগের আহত এক নেতা মারা গেছেন। তাঁর নাম রাবিকুল ইসলাম (২৫)। আজ সোমবার বেলা একটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত রাকিবুল ইসলাম আমানউল্যাহপুর গ্রামের পাটোয়ারী বাড়ির সফি উল্যাহর ছেলে। তিনি ছাত্রলীগের ইউনিয়ন কমিটির সদস্য।

এ ঘটনায় পুলিশ গত রোববার রাতে এবং গতকাল দুপুরে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে ছাত্রশিবিরের পাঁচজন কর্মীকে আটক করেছে। ঘটনার বিষয়ে নিহত রাকিবুলের মা বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ থানায় গতকাল ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। ঘটনার জের ধরে ওই এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, আমানউল্যাহপুর ইউনিয়নের ছাত্রলীগ, যুবলীগের সঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীদের আধিপত্য বিস্তারের বিরোধ দীর্ঘদিনের। এর আগেও সেখানে উভয়পক্ষের মধ্যে একাধিকবার পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংর্ঘষের ঘটনা ঘটেছে। ওই সব ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা রয়েছে।

সূত্র জানায়, গত রোববার রাত আটটার দিকে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা রাবিকুল ইসলামসহ কয়েকজন দলীয় নেতা–কর্মী আমানউল্যাহপুর বাজারের একটি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় ছাত্রশিবিরের ১০ থেকে ১৫ জনের একদল কর্মী ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সেখানে অতর্কিতে হামলা চালান। হামলাকারীরা প্রথমেই দোকানে বসা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে তাঁরা দোকানের ভেতর ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়েও কোপায়।

স্থানীয় লোকজন জানায়, হামলার ওই ঘটনায় ছাত্রলীগের ইউনিয়ন নেতা রাকিবুল ইসলামসহ তাঁর সঙ্গে থাকা আরও চারজন আহত হন। তাঁরা হলেন মো. হাবিব, মো. রনি, মো. মনু, মো. রায়হান। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর আশপাশের লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাকিবুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং রায়হানকে পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়।

জানতে চাইলে ছাত্রশিবিরের হামলায় আহত ছাত্রলীগের নেতা রাকিবুল ইসলাম ওরফে রাকিব মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন-উর-রশিদ চৌধুরী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গত রোববার রাতে আমানউল্যাহ বাজারের একটি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় শিবিরের কর্মীরা সেখানে হামলা চালান। এতে গুলিতে ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে পাঁচজন আহত হন। তাঁদের মধ্যে রাকিবুল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মারা যান।

ওসি জানান, আলাইয়াপুর ইউনিয়নে স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এর আগেও দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার পাল্টাপাল্টি হামলা ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। গত রোববার রাতের ঘটনায় ছাত্রশিবিরের ফারুক আহম্মেদ, আকরাম হোসেন, মাসুদ আলম, ইব্রাহিমসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা সবাই এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

এদিকে হামলার বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য ছাত্রশিবিরের জেলা সেক্রেটারি হুমায়ুন কবিরের মুঠোফোনে ফোন দিয়ে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে গতকাল বিকেলে জেলা ছাত্রশিবিরের (উত্তর) ই-মেইল থেকে পাঠানো একটি প্রতিবাদে ছাত্রলীগের কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় শিবিরের কেউ জড়িত নন বলে দাবি করা হয়। নাম ও স্বাক্ষরবিহীন এই প্রতিবাদে দাবি করা হয়, আমানউল্যাহপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে ওই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে শিবিরের নেতা-কর্মীদের নাম জড়ানো হচ্ছে।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আমানউল্যাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান অভিযোগ করেন, ছাত্রশিবিরের কর্মীরা পূর্ববিরোধের জের ধরে সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে গত রোববার রাতে ছাত্রলীগ কর্মীদের ওপর অতর্কিতে গুলি করেছেন। এতে ছাত্রলীগের পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রাকিবুল ইসলাম গতকাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

আরিফুর রহমান বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। ছাত্রশিবির নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য এ অপপ্রচার চালাচ্ছে। বাজারের অনেক লোক দেখেছে কারা প্রকাশ্যে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করেছে।