শতভাগ বিদ্যুতের উপজেলায় বিদ্যুৎ-বঞ্চিত দেড় শ পরিবার

কমলগঞ্জের আদমপুর বন বিট এলাকাসংলগ্ন কালেঞ্জী খাসিয়াপুঞ্জি।  ছবি: প্রথম আলো
কমলগঞ্জের আদমপুর বন বিট এলাকাসংলগ্ন কালেঞ্জী খাসিয়াপুঞ্জি। ছবি: প্রথম আলো

সরকারিভাবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের আওতায় আসতে পারেনি উপজেলার ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী আদমপুর বন বিট এলাকার কালেঞ্জী খাসিয়াপুঞ্জি ও পুঞ্জির বাইরের কালেঞ্জী গ্রাম। এতে এলাকার প্রায় দেড় শ পরিবারের সহস্রাধিক মানুষ বিদ্যুৎ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কমলগঞ্জকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেন। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, কালেঞ্জী এলাকায় বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু বনের ভেতর দিয়ে বিদ্যুতের তার নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বন বিভাগের আপত্তির কারণে কাজ আর এগোয়নি। বনের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে কীভাবে বিদ্যুতের লাইন স্থাপন করা যায়, সে ব্যাপারে জরিপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৫০০ ফুট ওপরে পাহাড়ি টিলার স্তরে স্তরে খাসিয়া সম্প্রদায়ের বসতঘর। আঁকাবাঁকা পথে ১৫২টি সিঁড়ি বেয়ে টিলার ওপরে পুঞ্জির হেডম্যানসহ অন্যদের বাসায় পৌঁছাতে হয়। খাসিয়াপুঞ্জির ৯৫টি পরিবারে প্রায় ৬০০ লোক। তাদের আয়ের প্রধান উৎস জুমের খাসিয়া পান ও লেবু। পুঞ্জির পাশের কালেঞ্জী গ্রামে ৫০টি পরিবারে প্রায় ৪০০ লোকের বসবাস। সেখানে এখনো বিদ্যুতের ছোঁয়া লাগেনি। উপজেলা সদর থেকে পুঞ্জিতে পৌঁছানোর রাস্তা বেহাল।

খাসিয়া সম্প্রদায়ের কয়েকজন বলেন, বন বিভাগের আপত্তির কারণে গ্রাম দুটিতে বিদ্যুতায়ন সম্ভব হচ্ছে না। পুঞ্জির নারী-পুরুষেরা টিলার নিচের কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করে টিলার ওপরে তুলে নিয়ে আসেন। বিদ্যুৎ-সুবিধা মিললে বৈদ্যুতিক পাম্প বসিয়ে নিচ থেকে টিলার ওপরে ঘরে ঘরে পানি তোলা যেত।

যাতায়াতব্যবস্থার কারণেও কালেঞ্জী খাসিয়া সম্প্রদায় ও কালেঞ্জী গ্রামের মানুষদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আদমপুর বাজার থেকে ৯ কিলোমিটার পূর্বে সংরক্ষিত বনের মধ্যে কালেঞ্জী খাসিয়াপুঞ্জি ও পুঞ্জিঘেঁষা কালেঞ্জী গ্রাম।

পুঞ্জি হেডম্যান রিটেঙেন ঘেরিয়েম বলেন, পুঞ্জির স্কুল-কলেজপড়ুয়া প্রায় ২০০ ছাত্রছাত্রী বেশির ভাগ সময় পায়ে হেঁটে ৯ কিলোমিটার পার হয়ে আদমপুরে যেতে হয়। সেখান থেকে গাড়িযোগে কলেজে যেতে হয়। যাতায়াতের দুর্ভোগ নিয়ে খাসিয়া পরিবারগুলো আদমপুর বাজারে যায়। তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও রাস্তাঘাটের সমস্যার কারণে আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’

এ বিষয়ে আদমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন বলেন, কালেঞ্জী খাসিয়াপুঞ্জি ও কালেঞ্জী গ্রামে বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের জন্য প্রায় দেড় বছর আগে বৈদ্যুতিক খুঁটি এনে রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের ঠিকাদারও নিয়োগ হয়েছিল। তবে বন বিভাগের আপত্তির কারণে এখনো সেখানে বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করা যায়নি। তবে বন বিভাগ থেকে একজন সার্ভেয়ার নিয়োগ দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনের জন্য জরিপ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যে তিনবার তারিখ নির্ধারণ হলেও বন বিভাগের সার্ভেয়ার আসেননি। ৩ মার্চ সার্ভেয়ার কালেঞ্জী খাসিয়াপুঞ্জি এলাকায় জরিপে আসবেন বলে বন বিভাগ জানিয়েছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ আঞ্চলিক অফিসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম-কম) ওবায়দুল হক বলেন, কালেঞ্জী খাসিয়াপুঞ্জি ও কালেঞ্জী গ্রামকে বিদ্যুতায়নের আওতায় আনতে কাজ শুরু হয়েছিল। ঠিকাদারের লোকজন খাসিয়াপুঞ্জি এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটিও এনে রেখেছিলেন। বন বিভাগের আপত্তির কারণে এ দুটি গ্রামকে এখনো বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা যায়নি।

কমলগঞ্জের রাজকান্দি বন রেঞ্জ কর্মকর্তা আবু তাহের মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন স্থাপনে নিষেধ আছে। শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে কালেঞ্জী খাসিয়াপুঞ্জি ও গ্রামের কথা ভেবে বনের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে কীভাবে বিদ্যুতের লাইন স্থাপন করা যায়, সে ব্যাপারে ইতিমধ্যে জরিপ করা হয়েছে। তাঁর আশা, অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।