আগামী দুই বছর বাংলাদেশের সামনে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ কূটনীতি: এক দশকে বিশ্বে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থান’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। ছবি: প্রথম আলো
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ কূটনীতি: এক দশকে বিশ্বে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থান’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। ছবি: প্রথম আলো

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন আগামী দুই বছরকে ‘বাংলাদেশের স্বর্ণযুগ’ আখ্যায়িত করে এ সময় বাংলাদেশের সামনে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ আছে বলে মন্তব্য করেছেন। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান, ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হয়ে আসার পর অর্থনীতিতে অগ্রাধিকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির প্রসঙ্গগুলো অন্যতম।

আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ কূটনীতি: এক দশকে বিশ্বে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থান’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন । ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিকাব) ওই সেমিনারের আয়োজন করে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী দুই বছর আমাদের জন্য স্বর্ণযুগ । কারণ, আমাদের জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এই সময়ের মধ্যে। আমরা এই দুই বছর আমাদের ব্র্যান্ডিং করব। এতে আমরা অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হব। তবে এই সময়ে আমাদের বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।’

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আবদুল মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আমরা এখনো আশাবাদী । আমরা যাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি, তারা কিন্তু সহজ নয়। এটা নিয়ে যে চ্যালেঞ্জ, সেটা আমরা ওয়াকিবহাল।’

প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বর্তমান সম্পর্ক সোনালি অধ্যায় মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের উদ্দেশে বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে আমরা সমাধান করতে চাই। আমরা ভারতকে বলেছি, এমন কিছু করবেন না যাতে জনগণের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হয়, যেহেতু আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত।’

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো রাখার জন্য চীন ও যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি রাখাও একটা চ্যালেঞ্জ করেন আবদুল মোমেন । বলেন, ‘আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন—এদের খুশি রাখা। চীনকে খুশি রাখতে হবে আমাদের অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে। আর আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত তো আছেই। পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোকে সঙ্গে রাখতে হবে।’

মূল প্রবন্ধে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বাংলাদেশ গত এক দশকে যে উন্নতি করেছে, তা আজ সারা বিশ্বে প্রশংসিত । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অভাবনীয় উন্নতির মূল ব্যক্তি, তা সর্বজনবিদিত। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে দৃষ্টান্ত। প্রতিবেশীদের সঙ্গে অমীমাংসিত ইস্যু আন্তরিকভাবে সমাধান করেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের মানবতা আজ প্রশংসিত। উন্নয়নশীল বিশ্বে নেতৃত্ব দিয়ে সুনাম কুড়িয়েছে৷ দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের ৯০ শতাংশ নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে, বাংলাদেশের এই আত্মসম্মানবোধের প্রশংসা করছেন কূটনীতিকেরা।

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট আগামী দিনের অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ । এই ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ যে চুক্তি করেছে, তা মোটেই ভালো চুক্তি হয়নি। কারও চাপে পড়ে ওই চুক্তি সই করতে হলেও তা সই করা উচিত হয়নি। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বৃহৎ শক্তি ভারত, রাশিয়া ও চীনকে আমাদের পক্ষে পাইনি। জাপানও এই ইস্যুতে খুব বেশি পাশে নেই। এই সংকট সমাধানের জন্য এই শক্তিগুলোকে বাংলাদেশের পক্ষে আনা আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ।’

ডিকাব সভাপতি আঙ্গুর নাহারের সভাপতিত্বে শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান।