মুক্তিযোদ্ধার বসতঘরে পুলিশের হামলা-ভাঙচুর

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের মাঝেরপাড়া এলাকায় প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার আনোয়ার হোসেন বাঙালির বসতঘরে পুলিশ হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় পুলিশের মারধরে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের নারী সদস্যসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে এই ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহারের বিষয়টি এখনো সিদ্ধান্তের পর্যায়ে আছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইকবাল হোসেন।

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা হামলা ও ভাঙচুরকারী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগও তুলেছেন। আনোয়ার হোসেন বাঙালি কক্সবাজারের একমাত্র যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী। তাঁর স্ত্রী লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নেচারা বেগম (৬০) ও বড় ছেলে লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিমের স্ত্রী শাহনাজ আকতার (৩৪) এই হামলায় আহত হয়েছেন।

আহত অন্যরা হলেন মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনের পুত্রবধূ ও চকরিয়া আবাসিক মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক ফরিদা ইয়াসমিন (৩০), আনোয়ার হোসেনের ছেলে মুরাদুল করিম সিফাত (২৭) ও তাঁর স্ত্রী সাবাহ নূর (২০)। তাঁদের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে মুরাদুল করিম সিফাতের বাম হাত ভেঙে গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রয়াত আনোয়ার হোসেন বাঙালির বসতঘরের নিচতলায় ছয়টি কক্ষের আসবাব এলোমেলোভাবে মেঝেতে পড়ে রয়েছে। কয়েকটি আলমারির দরজা ভাঙা। বসতঘরের অন্তত চারটি জানালার কাচ ভেঙে ফেলা হয়েছে। প্রথম কক্ষটিতে বঙ্গবন্ধুর একটি বড় ছবি ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

আনোয়ার হোসেন বাঙালির ছেলে লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান, তুষ্ট লাল বিশ্বাস ও এএসআই জেড রহমানের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন পুলিশের একটি দল অতর্কিতে বসতঘরে ঢুকে হামলা-ভাঙচুর শুরু করেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে পুলিশ সদস্যরা বাড়ির কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেন। বসতঘরে ঢুকেই নারী সদস্যদের পেটাতে শুরু করে পুলিশ। এ সময় বাড়িতে থাকা আমার ছোট ভাই বাধা দিলে পিটিয়ে তার বাম হাত ভেঙে দেওয়া হয়।’

তবে পুলিশ বলছে, মো. সাগর (২৮) নামের লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের মাঝেরপাড়ার এক চিহ্নিত অপরাধীকে ধরতে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় সাগরের আত্মীয়স্বজন পুলিশের ওপর হামলা করে। ঘটনার পরপরই পুলিশ সাগরকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশের ওপর হামলার খবর শুনে চকরিয়া থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সাগরের আত্মীয়স্বজনেরা মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙালির বসতঘরে লুকিয়ে আছে এমন সন্দেহে পুলিশ ওই বাড়িতে অভিযান চালায়। এতে পুলিশের সঙ্গে ওই পরিবারের লোকজনের ‘ভুল-বোঝাবুঝি’ হয়।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘একজন অপরাধীকে ধরতে যাওয়ার পরে একটা বিষয় নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। অপরাধীর বাড়িতে না ঢুকে পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙালির বাড়িতে ঢুকে পড়ে। পুলিশ ওই বসতঘরে কেন ঢুকেছে ও কেন ভাঙচুর করেছে, আমরা সেটা তদন্ত করছি। যাঁরা অপরাধ করছেন, আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

ঘটনার পরপরই মুক্তিযোদ্ধার বসতঘর পরিদর্শন করেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান, চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মোহাম্মদ মতিউল ইসলাম, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ সদস্য প্রত্যাহারের বিষয়টি এখনো সিদ্ধান্তের পর্যায়ে আছে। তবে কতজন পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার হবে, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’