নির্যাতনের শিকার সেই ছাত্রী ঢাকায়, নিরাপত্তাহীনতার কথা বলছেন স্বজনেরা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নির্যাতনের শিকার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীটিকে নিরাপত্তাহীনতা ও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা। তাঁদের ভাষ্য, ছাত্রদলের রাজনীতি করায় ওই ছাত্রীকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সেই হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) প্রত্যাহার করে না নেওয়ায় এবার নির্যাতন করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর ভাষ্য, পদপদবি না থাকলেও গণিত বিভাগের ওই ছাত্রী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয়।

ওই ছাত্রীর অভিযোগ, ১ মার্চ বিকেল সোয়া চারটায় তিনি পরীক্ষা দিয়ে একাডেমিক ভবনের সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় হঠাৎ ১২ থেকে ১৫ জন মুখোশধারী তাঁর পথরোধ করে। পরে তাঁকে পঞ্চম তলার একটি নির্জন স্থানে নিয়ে বেদম মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁর হাতে থাকা জ্যামিতি বক্স কেড়ে নিয়ে এর কাঁটা-কম্পাস দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জখম করে মুখোশধারীরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ওই ছাত্রী যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। স্বজনেরা জানান, তাঁর বুক, পিঠ, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে কাঁটা-কম্পাস দিয়ে অসংখ্য আঘাত করা হয়েছে। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি (মহিলা) ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার মাহবুব আলম জানান, ছাত্রীর শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া সুচালো কিছুর আঘাতে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে।

ছাত্রীর বড় বোন গতকাল দুপুরে জানান, হামলার পর নিরাপত্তার অভাবে তাঁর বোনকে তিন দিন বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে বুধবার দুপুরে তাঁকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর ক্ষতে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। তাই তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার রাতে লঞ্চে ঢাকায় নেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, তাঁর বোনকে ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ রাত ১টা ৫ মিনিটে একটি নম্বর থেকে কল দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। হুমকি দিয়ে বলা হয়, ‘ছাত্রদল করো, ধর্ষণের পর হত্যা করে ব্রিজের ওপর থেকে কীর্তনখোলা নদীতে ফেলে দেব।’ এ ঘটনায় নগরের বিমানবন্দর থানায় একটি জিডি করা হয়েছিল। এরপর ওই জিডি প্রত্যাহার করার জন্য নানাভাবে তাঁর বোনকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তিনি মনে করেন, এরই ধারাবাহিকতায় ১ মার্চ বিকেলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে তাঁর বোনের ওপর এ জঘন্য হামলা হয়।

ছাত্রীর বড় ভাই বলেন, ‘এর আগেও আমার বোনকে একবার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তখন থানায় জিডি করেও কোনো সুফল হয়নি। উল্টো জিডি করায় আমার বোনকে নানা সময় হুমকি দেওয়া হয়। এ জন্য এবার হামলার পর আমরা কোথাও অভিযোগ দিইনি। কারণ, আগে জিডি করে এমন পরিণতি হয়েছে। এমনিতেই আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। এর মধ্যে আবার নতুন করে আইনি পদক্ষেপ নিয়ে ঝামেলা বাড়াতে চাইছি না।’

জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ বিন আালম গতকাল দুপুরে বলেন, ‘আমি এখানে যোগদান করেছি ছয় মাস আগে। তাই এটা কোন পর্যায়ে আছে, তা খোঁজ না নিয়ে বলতে পারব না।’

এ ঘটনাকে বর্বরোচিত বলে উল্লেখ করে বরিশাল নগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুল হক। আজ শুক্রবার তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীর ওপর এমন নির্যাতন সভ্যতাবিবর্জিত কাজ। ছাত্রদলের সংগঠক হওয়ার কারণেই তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার, এটা অনেকটাই স্পষ্ট। এই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, সেটা খুঁজে বের করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সুব্রত কুমার দাস আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় ছাত্রীর পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে বুধবার রাতে তিনি ঘটনাটি জেনেছেন। আগামীকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি এ বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।