এক যন্ত্রেই সেচ ও পোকা দমন

বান্দরবানের লাইমিপাড়া লাললুং সাং বম ও তাঁর উদ্ভাবিত স্প্রে মেশিন
বান্দরবানের লাইমিপাড়া লাললুং সাং বম ও তাঁর উদ্ভাবিত স্প্রে মেশিন

ফলগাছের উঁচু ডালে আসা ফুলে কীটনাশক ছিটানো সহজ নয়। তবে সেই কাজটি অনায়াসেই করা যায় বান্দরবানের লাললুং সাং বমের উদ্ভাবন করা স্প্রে যন্ত্র দিয়ে। পাশাপাশি এই যন্ত্র দিয়ে দিয়ে ফল বাগানে দিব্যি সেচও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এ কারণে জেলার ফল বাগানিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই স্প্রে যন্ত্রটি।

বান্দরবানের ফল বাগান চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নল লাগিয়ে ৩০০ ফুট উঁচু গাছেও অনায়াসে কীটনাশক ছিটানো যায় লাললুং সাং বমের উদ্ভাবিত যন্ত্র দিয়ে। গাছের গোড়ায় এই যন্ত্র দিয়ে খুব দ্রুত সেচ দেওয়া যায়।

জেলা শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-চিম্বুক সড়কের লাইমিপাড়ার বাসিন্দা লাললুং সাং বম গত বছর স্প্রে যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেছেন। তিনি নিজে আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফলের বাগান করেছেন। তবে পোকা দমনে জুতসই যন্ত্র না থাকায় ফলন ভালো হচ্ছিল না। বাজারের স্প্রে যন্ত্রগুলো ব্যবহার করেও তেমন ফল পাচ্ছিলেন না। উঁচু-নিচু পাহাড়ের উঁচু গাছে কীটনাশক ছিটানো কিংবা নিয়মিত পানি সরবরাহ করা সহজ ছিল না। তাই বাগানে নিজের ভোগান্তি কমাতে নানা যন্ত্রপাতি সংযোজন করে পাহাড়ের পরিবেশের উপযোগী স্প্রে যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন।

যেভাবে উদ্ভাবন

লাললুং সাং বম বললেন ‘এটি কোনো উদ্ভাবন নয়, মূলত স্প্রে মেশিন তৈরি করেছি। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে মাত্র। দুটি ১০০ পিএসআই মোটর, মোটরসাইকেলের দুটি ব্যাটারি, ১০ ওয়াটের সোলার প্যানেল উপকরণ হিসেবে প্রয়োজন। একটি কাঠের বক্সের কাঠামোতে এসব সুবিধা অনুযায়ী সংযোজন করলে স্প্রে যন্ত্র হয়ে যায়। সেখানে বহির্গমন পাইপ লাগিয়ে পানি বা কীটনাশক ছিটানো সম্ভব। একটি স্প্রে যন্ত্র তৈরিতে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়।’

প্রায় পাঁচ কেজি ওজনের স্প্রে যন্ত্রটি পাহাড়ে অত্যন্ত কার্যকর ও সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় বাগানিরা রুমা, থানচি, রোয়াংছড়িসহ বিভিন্ন পাড়া থেকে এসে নিয়ে যাচ্ছেন। ফারুকপাড়ার বাসিন্দা আচেন বম বলেছেন, যন্ত্রটি ভবন নির্মাণেও বেশ কাজে দেয়। সবচেয়ে ভালো দিক, সহজে বহনযোগ্য। হাতে করে নিয়ে যেখানে পানির উৎস অথবা ট্যাংকে বসিয়ে পানি ছিটানো যায়। উচ্চ ক্ষমতার ব্যাটারি সংযোজন করা হলে আরও দূরত্বে ও উঁচুতে পানি ও ওষুধ ছিটানো যাবে।

বেসরকারি সংস্থা কারিতাসের কর্মকর্তা বয়খুপ বম বলেন, লাললুং সাং বমের যন্ত্রটি যথেষ্ট কার্যকর। বাগানের জন্য জুতসই।

উদ্ভাবক লাললুং সাং বম বললেন, জানাজানি হওয়ায় যন্ত্রটি নেওয়ার জন্য বহু লোকজন আসছেন। কিন্তু এত যন্ত্র সরবরাহ দিতে পারছেন না। দামে কম হওয়ায় বাগানিরা সবাই নিতে চান।