শুধু কনেই এখন নিখোঁজ

কনে সুইটি খাতুন
কনে সুইটি খাতুন

যেখানে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে, সেখান থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে কনের খালার লাশ ভেসে উঠল। আর ঘটনাস্থল থেকে খানিকটা দূরে জেলেদের জালে উঠে এল তার ফোপাত বোনের লাশ। কিন্তু ঘটনার প্রায় তিন দিন হয়ে গেলেও কনে সুইটি খাতুনই শুধু নিখোঁজ রইল।

রাজশাহীর চরখিদিরপুরে বউভাতের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে গত শুক্রবার সন্ধ্যার পরে পদ্মা নদীতে নৌকাডুবির পর এ পর্যন্ত আটজনের লাশ উদ্ধার করা হলো। এদিকে এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির আজ রোববার রাতে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা রয়েছে।

সর্বশেষ আজ বিকেল তিনটার দিকে কনে সুইটি খাতুনের খালা আঁখি খাতুনের (২৫) লাশ পাওয়া যায়। রাজশাহী নগরের শ্রীরামপুর এলাকায় যেখানে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে সেখান থেকে নদীর ভাটিতে চারঘাট উপজেলার টাঙ্গন এলাকায় তাঁর লাশ ভেসে ওঠে।

আর বেলা দেড়টার দিকে কনের ফুফাত বোন রুবাইয়া আক্তারের (১৩) লাশ পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে রাজশাহীর লালন শাহ্ মুক্তমঞ্চের সামনে পদ্মা নদীতে জেলেদের জালে তার লাশ উঠে আসে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা লাশটি উদ্ধার করে।

কনে রাজশাহীর পবা উপজেলার ডাঙ্গেরহাট গ্রামের শাহিন আলীর মেয়ে। দেড় মাস আগে পদ্মার ওপারে একই উপজেলার চরখিদিরপুর গ্রামের ইনসার আলীর ছেলে রুমন আলীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কিন্তু তখন বউভাতের অনুষ্ঠান করা হয়নি। তাই গত বৃহস্পতিবার বরের বাড়িতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বরপক্ষ কনেকে সেদিন চরখিদিরপুরে নিয়ে যায়। প্রথা অনুযায়ী, পরদিন শুক্রবার কনেপক্ষের লোকজন বর এবং কনেকে আবার কনের বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য যায়। ফেরার পথে তাদের দুটি নৌকাই ডুবে যায়। নৌকা দুটিতে ৪১জন যাত্রী ছিল।

রাজশাহীর পবা নৌপুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মেহেদী মাসুদ জানান, ডুবে যাওয়া নৌকা দুটিই উদ্ধার করা হয়েছে। এখন কনে নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের সন্ধানে উদ্ধার তৎপরতা চলছে। বিআইডব্লিউটিএ, নৌ-পুলিশ এবং বিজিবিও উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে।

নৌকাডুবির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। এই কমিটির সদস্য পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহাদাত হোসেন জানান, দুটি নৌকাই ছিল মাছ ধরা ডিঙ্গি নৌকা। এতে পাঁচজন করে জেলে মাছ ধরার জন্য বসে থাকে। সর্বোচ্চ ১০জন যাত্রী এতে কোনোমতে বসতে পারে। সেই জায়গায় তারা ২০-২১জন করে যাত্রী একেকটি নৌকায় উঠেছিলেন। সেই সময় একটু বাতাস উঠেছিল। ঢেউয়ে নৌকায় পানি উঠে যাচ্ছিল। নৌকা বদল করার জন্য যাত্রী দাঁড়িয়েছিলেন। এই সময় দুলনিতে নৌকায় আরও পানি উঠে যায়। এতে নৌকার ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। মাঝি ইঞ্জিন ঠিক করার চেষ্টা করতে করতেই নৌকা ডুবে যায়। দুটি নৌকা একইভাবে ডুবে যায়। তিনি বলেন, তারা এই প্রতিবেদনে সুপারিশ করছেন যে, জেলেদের নৌকা ও যাত্রীবাহী নৌকা আলাদা হতে হবে। যাত্রীদের লাইফজ্যাকেট থাকতে হবে।