সাবেক স্বামীকে ফাঁসাতে স্ত্রীকে হত্যা করেন তিনি

সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি ফারহানা আক্তার পপি নামে এক তরুণীকে পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনার জন্য ওই গৃহবধূর সাবেক স্বামীকে দায়ী করেন তাঁর বর্তমান স্বামী হাসিবুর রহমান। ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গত ৪ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে মারা যান ফারহানা। তবে সাবেক স্বামী নন, বর্তমান স্বামী হাসিবুর রহমান নিজেই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

আজ সোমবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান।

আজ সকালে নিজ কার্যালয়ে সম্মেলন কক্ষে বিফ্রিংয়ে এসপি মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হাসিবুর রহমানের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামে। গত শনিবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা আদালতের সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল ইসলামের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির দেন হাসিবুর। তিনি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার মালোত গ্রামের রোকনউদ্দিন সরদারের মেয়ে ফারহানা আক্তারের তৃতীয় স্বামী। এর আগে ফারহানার দ্বিতীয় বিয়ে হয় ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চারাবটতলা এলাকার মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তবে শ্বশুর-শাশুড়ি ও মিজানুর নির্যাতন করায় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফারহানা পালিয়ে বাবার বাড়ি পাইকগাছায় চলে আসেন। পরে বিয়ে বিচ্ছেদের নোটিশ পাঠিয়ে মিজানুর আরেকটি বিয়ে করেন। এদিকে বাবার বাড়িতে ফারহানা খুলনার কপিলমুনির মাহমুদকাটিতে একটি বিউটি পারলার পরিচালনা করতেন। সেখানে হাসিবুরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। হাসিবুর নিজেকে একটি বেসরকারি কোম্পানির পরিবেশক হিসেবে নিজের পরিচয় দেন। পরে ২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর তাঁদের বিয়ে হয়।

পুলিশ সুপার বলেন, হাসিবুরের পরিবার ফারহানাকে মেনে নেয়নি। তাই তাঁরা তালা উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের অসীম সাধু নামে এক ব্যক্তির বাড়ি ভাড়া করে বসবাস করতেন। তবে কিছুদিন পরে তাঁদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। হাসিবুর তাঁর স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এরই অংশ হিসেবে ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত একটার দিকে ফারহানার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি। পরে হাসিবুর রহমান নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে বাড়িওয়ালা অসীম সাধুকে ডেকে আনেন। স্থানীয়রা ফারহানাকে উদ্ধার করে প্রথমে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে ওই রাতেই তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ঢাকায় ফারহানার জবানবন্দি নিতে তালা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেকেন্দার আলী শেখ আসেন। ফারহানার দ্বিতীয় স্বামী মিজানুর রহমান শেখ, তার ভাই মোমিনুর রহমান শেখ, দোকান কর্মচারী হেলাল ও ভগ্নিপতি আবদুল গফুর এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত—এমন জবানবন্দি গ্রহণ করানোর জন্য এই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। এ ছাড়া শ্বশুর মো. রোকনউদ্দিন সরদারকে ভুল বুঝিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তালা থানায় মিজানুর রহমান শেখসহ চারজনের নামে মামলা করান হাসিবুর। তবে ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ৪ মার্চ সকালে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ফারহানা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক সেকেন্দার আলী শেখ এ ঘটনার সঙ্গে হাসিবুরের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হন। পরে শনিবার মোবারকপুরের ভাড়া বাসার সামনে থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেন।

গ্রেপ্তারের পর আজ দুপুরে হাসিবুর সাংবাদিকদের বলেন, ফারহানা তাঁর সাবেক স্বামী মিজানুরের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন। এটা তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাই পেট্রল ঢেলে দিয়ে আগুন লাগিয়ে তার স্ত্রীকে হত্যা করেন তিনি।

সরেজমিন গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তালার মোবারকপুর গ্রামে গিয়ে প্রথম আলোর প্রতিনিধি জানতে পারেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারি ঘটনার আগে স্থানীয় একটি দোকান থেকে হাসিবুর চার লিটার পেট্রল ও প্লাস্টিকের পাইপ কিনেছিলেন। দোকানটির মালিকের কাছ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। পরে জানা যায়, পেট্রলভর্তি একটি কন্টেইনার ও পাইপ লুকিয়ে রাখেন হাসিবুর। ঘটনার পর পুলিশ কন্টেইনারটি উদ্ধার করে।