কেরানীগঞ্জের কারখানায় মাস্ক তৈরির ধুম

মাস্ক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এক ব্যক্তি। গতকাল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে।  দীপু মালাকার
মাস্ক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এক ব্যক্তি। গতকাল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে।  দীপু মালাকার

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিন ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার পর মাস্কের চাহিদা বেড়েছে। ক্রেতার চাহিদা মেটাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকার অর্ধশতাধিক ছোট–বড় পোশাক কারখানায় মাস্ক তৈরির ধুম পড়েছে। কারখানাগুলোর মালিক–কর্মচারীরা মাস্ক তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

গতকাল সোমবার দুপুরে হাসনাবাদ এলাকার হাসনাবাদ সুপার মার্কেটের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, পোশাক কারখানাগুলোতে কর্মচারীরা মাস্ক তৈরিতে ব্যস্ত। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পোশাক ব্যবসায়ী ও হকাররা নান নকশা ও রঙের মাস্ক কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

হাসনাবাদ সুপার মার্কেটের দোতলার তৈরি পোশাক কারখানার মালিক অনয় দেবনাথ বলেন, ‘আমার কারখানায় শার্ট তৈরি করা হয়। কিন্তু মাস্কের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সপ্তাহখানেক ধরে আমি ও একজন কারিগর মিলে মাস্ক তৈরি করছি। প্রতিদিন গড়ে ২২০ থেকে ২৫০ ডজন মাস্ক তৈরি করছি।’ তিনি জানান, তিনি দুই ধরনের মাস্ক তৈরি করছেন। একধরনের মাস্ক ডজন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, আরেকটু উন্নত মানের মাস্ক ৩৬০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

অনয় দেবনাথ জানান, এক গজ কাপড়ে ৪০টি মাস্ক তৈরি করা যায়। গত সপ্তাহে প্রতি গজ কাপড় কিনেছেন ২০ থেকে ২২ টাকায়। কিন্তু এখন প্রতি গজ ৩০-৩৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

খুলনা থেকে আসা মাস্ক ক্রেতা সামসুল আলম বলেন, তিনি খুলনা শহরে রুমাল ও টুপির পাশাপাশি মাস্ক বিক্রি করেন। এখন শুধু মাস্কই বিক্রি করছেন। এলাকার অন্যান্য হকারের কাছ থেকে খবর পেয়ে কেরানীগঞ্জে মাস্ক কিনতে এসেছেন। ১০০ ডজন মাস্ক কিনে রাতেই খুলনায় ফিরে যাবেন।

>

হাসনাবাদ এলাকার অর্ধশতাধিক ছোট-বড় পোশাক কারখানার মালিক-কর্মচারীরা মাস্ক তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

পুরান ঢাকার জুরাইনের আলম মার্কেট থেকে আসা আমির গার্মেন্টসের পরিচালক মো. আলাউদ্দিন বলেন, তিনি শার্ট বিক্রি করেন। করোনাভাইরাসের কারণে মাস্কের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পাঁচ দিন ধরে মাস্ক বিক্রি করছেন। হাসনাবাদের কারখানা থেকে পাইকারি দরে মাস্ক কিনে বিক্রি করছেন। এখান থেকে প্রতি ডজন মাস্ক ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং উন্নত মানের মাস্ক ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

একটি কারখানার কর্মচারী মো. জামাল বলেন, মাসখানেক আগেও তিনি শার্ট তৈরির কাজ করতেন। ১৫ দিন ধরে মাস্ক তৈরির কাজ করছেন। তিনি জানান, তিনিসহ পাঁচজন কর্মচারী সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মাস্ক তৈরি করছেন। গড়ে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার মাস্ক তৈরি করছেন তাঁরা। বাড়তি আয়ের জন্য কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় হাজারখানেক পোশাককর্মী শার্ট তৈরির কাজ ছেড়ে দিয়ে মাস্ক তৈরির কাজ করছেন।

কারখানার মালিকেরা জানান, রেক্সিন ও নেটজাতীয় কাপড় দিয়ে মাস্ক তৈরি করা হয়। মাসখানেক আগে চীনে তৈরি নেট কাপড় প্রতি গজ ১২০ টাকা পাইকারি দরে কিনেছেন। কিন্তু বর্তমানে একই কাপড় প্রতি গজ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। দাম আরও বাড়তে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা।