সম্পদে এগিয়ে সাহাদারা, মামলায় আহসানুল

সাহাদারা মান্নান,আহসানুল তৈয়ব
সাহাদারা মান্নান,আহসানুল তৈয়ব

বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে সম্পদে সবচেয়ে এগিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এবং দলের প্রয়াত সাংসদ আবদুল মান্নানের স্ত্রী ও সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাদারা মান্নান। তাঁর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৯ কোটি ৯৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৫৩ টাকা। ১১ বছর আগে তাঁর সম্পদ ছিল ১ কোটি ৬১ লাখ ৪৭ হাজার ৯৪৭ টাকার। এই সময়ে সম্পদ বেড়েছে ছয় গুণ।

বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সদস্য এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকির এগিয়ে মামলায়। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও নাশকতার ১০টি মামলা চলছে। অতীতেও তাঁর বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা হয়েছিল। তাঁর নামে স্থাবর–অস্থাবর মিলে প্রায় দুই কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। স্ত্রীর নামে রয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকার সম্পদ। ১১ বছর আগে এই নেতার স্থাবর-অস্থাবর মিলে ৯৪ লাখ ৪৪ হাজার ২৫০ টাকার সম্পদ ছিল।

বগুড়া-১ আসনে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় দেওয়া সম্পদের তথ্যের সঙ্গে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দাখিল করা প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাহাদারা মান্নানের দাখিল করা হলফনামা থেকে জানা গেছে, তাঁর বার্ষিক আয় ৩৫ লাখ ৪৫ হাজার ১৭১ টাকা। এর মধ্যে বাড়ি ও দোকানভাড়া থেকে ৬ লাখ ৪২ হাজার, বেসরকারি একটি ব্যাংকের শেয়ার থেকে আয় ১৬ লাখ ২৩ হাজার ১৩১ টাকা, ব্যাংকের সুদ থেকে আয় ১২ লাখ ৫০ হাজার ৪০ টাকা ও জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে সম্মানী ভাতা থেকে আয় ৩ লাখ টাকা। তাঁর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৯৯ লাখ ১১ হাজার ৭১১ টাকা। এর মধ্যে নগদ ২৮ লাখ ৯৬ হাজার ২০০ টাকা, ব্যাংকে ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮০ হাজার ৯৬১ টাকা, তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ার বাবদ ১ কোটি ৩১ লাখ ৮৫ হাজার ৫০, তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানিতে শেয়ার বাবদ ৬০ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ টাকা, পোস্টাল অর্ডার ও সঞ্চয়পত্র বাবদ ৩০ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত, ১০ ভরি স্বর্ণালংকার বাবদ ৩০ হাজার টাকা, ৪০ হাজার টাকার আসবাব এবং স্বামীকে ঋণ বাবদ ৬৯ হাজার টাকা রয়েছে।

সাহাদারার স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৯৬ লাখ ৫৪ হাজার ২৪২ টাকা। এর মধ্যে গাজিপুরে কৃষিজমি বাবদ ২৫ লাখ, বগুড়া শহরে তিনতলা বাড়ি, সারিয়াকান্দির হিন্দুকান্দিতে এবং গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিয়াহাটিতে অকৃষিজমি বাবদ ৪ কোটি ১৯ লাখ ৫২ হাজার ২৪২, সোনতলার আগুনাতাইর এবং সারিয়াকান্দি নারচিতে দুটি দালান বাবদ ২২ লাখ ৪২ হাজার, ঢাকায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট বাবদ ১৯ লাখ ৬০ হাজার এবং দোকানঘরসহ অন্য বাবদ ১০ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে।

২০০৮ সালের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে প্রয়াত সাংসদ আবদুল মান্নানের দাখিল করা হলফনামা সংগ্রহ করে দেখা গেছে, সেখানে সাংসদের স্ত্রী সাহাদারা মান্নানের স্থাবর-অস্থাবর মিলে ১ কোটি ৬১ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৯ টাকার সম্পদ ছিল। ব্যাংকে ছিল ২৮ হাজার ৬২৮ টাকা। ২০০৮ সালে এই নেতার অস্থাবর সম্পদ ছিল ৩৭ লাখ ৭৯ হাজার ২১৬ টাকার। অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৯৯ লাখ ১১ হাজার ৭১১ টাকার।

এবারের হলফনামায় সাহাদারার অস্থাবর সম্পদ ৪ কোটি ৯৯ লাখ ১১ হাজার ৭১১ টাকার উল্লেখ রয়েছে। ২০০৮ সালে তাঁর কাছে নগদ ছিল ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা, এখন নগদ অর্থের পরিমাণ ২৮ লাখ ৯৬ হাজার ২০০ টাকা। তাঁর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২৮ হাজার ৬২৮ টাকা ছিল। এখন ব্যাংকে জমা টাকার পরিমাণ ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮০ হাজার ৯৬১ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, শেয়ারে ২০০৮ সালে কোনো টাকা ছিল না। কিন্তু এখন রয়েছে ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার ৮ হাজার ৫ টাকা।

১১ বছর আগে সাহাদারার স্থাবর সম্পদ ছিল ১ কোটি ২৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩১ টাকা। এর মধ্যে ৪০ লাখ ৭৩ হাজার ৭৫০ টাকা মূল্যের অকৃষিজমি, ৭৮ লাখ ৫০ হাজার ৫৮১ টাকা মূল্যে একটি বাড়ি ও ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৪০০ টাকা মূল্যের একটি খামারের কথা উল্লেখ ছিল। এখন তাঁর স্থাবর সম্পদ প্রায় তিন গুণ বেড়ে হয়েছে ৪ কোটি ৯৬ লাখ ৫৪ হাজার ২৪২ টাকা।

হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিএনপির প্রার্থী আহসানুল তৈয়বের বার্ষিক আয় ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৮৩৩ টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আয় তাঁর ব্যবসা থেকে। নিজের ও স্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ১ কোটি ৩৮ লাখ ১৬ হাজার ৮৮৮ টাকা। নিজের ও স্ত্রীর স্থাবর সম্পদ রয়েছে ৭৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৫৫ টাকা।