ভৈরব নদ খননে কাজে ধীরগতি

ভৈরব নদের যশোর শহর অংশে খননকাজ বন্ধ রয়েছে। গত রোববার শহরের দড়াটানা এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
ভৈরব নদের যশোর শহর অংশে খননকাজ বন্ধ রয়েছে। গত রোববার শহরের দড়াটানা এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

ভৈরব নদের যশোর শহর অংশের চার কিলোমিটার খননকাজের মেয়াদ ১১ মাস। এরই মধ্যে সাত মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়েছে মাত্র ১৪ শতাংশ। সামনের চার মাসে ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ করতে হবে। কাজের এই ধীরগতির কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’–এর আওতায় ৯২ কিলোমিটার পুনঃখননকাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

শহরাংশের খননকাজের মেয়াদ শেষ হতে চললেও নদের প্লাবনভূমির সীমানা নির্ধারণবিষয়ক জটিলতার নিরসন হয়নি। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সচিবকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি গঠন করেই নদী কমিশন দায় শেষ করেছে। দুই মাসের মধ্যেও এই কমিটি কাজ শুরু করতে পারেনি। কমিটির সদস্যরাও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।

গত রোববার শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানা সেতুর পাশে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুর পশ্চিম পাশে নদের আধা কিলোমিটার অংশে ছোট একটি খননযন্ত্র দিয়ে খননকাজ চালানো হচ্ছে। ওই অংশে আরও তিনটি খননযন্ত্র এনে রাখা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো কাজে লাগানো হয়নি। দু-একজন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেল।

কাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স এসএস অ্যান্ড এমটি নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘শহরাংশে নদের মাটির মান খুবই খারাপ। নদের তলদেশ না শুকানোর কারণে খনন করা যাচ্ছে না। আমরা মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা করব।’

যশোর শহরের পাগলাদাহ থেকে কাঠেরপুল পর্যন্ত চার কিলোমিটার খননকাজের জন্য ১১ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে গোপালগঞ্জের মেসার্স এসএস অ্যান্ড এমটি নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে গত বছরের ৬ আগস্ট কার্যাদেশ দেওয়া হয়। আগামী ২০ জুনের মধ্যে খননকাজ শেষ করার সময়সীমা রয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, দড়াটানা সেতুর পশ্চিম পাশে ৫৫০ মিটার ও পাগলাদহ এলাকায় আরও ৫০০ মিটার নদের পানি সেচে তলদেশ খনন করার কাজ চালানো হচ্ছে। এক কিলোমিটারের মধ্যে খননকাজ চলছে। অবশিষ্ট তিন কিলোমিটারে এখনো হাত দেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, নদের শহরাংশের চার কিলোমিটার খননের ১৪ শতাংশ কাজ হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের কাজের মান যাচাই করে সময় বাড়ানো যেতে পারে। তবে তাদের বর্ধিত সময় আগামী বছরের ২১ জুন পর্যন্ত বাড়তে পারে। কারণ মূল প্রকল্প ওই সময়ে শেষ হবে।

এদিকে যশোর শহরাংশে খননকাজের মেয়াদ শেষ হতে চললেও নদের প্লাবনভূমির সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা নিরসন হয়নি। ভৈরব নদের দড়াটানা সেতু থেকে কাঠেরপুল পর্যন্ত ৮০০ মিটার নদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্লাবনভূমির সীমানা নির্ধারণের জন্য ৫ জানুয়ারি সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের দুই মাসের মধ্যেও ওই কমিটি কাজ শুরু করেনি।

কাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্যসচিব যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘কোন কমিটির কথা বলছেন ঠিক বুঝতে পারছি না।’

কমিটির সদস্য পাউবো যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কমিটি গঠনের পর কোনো মিটিং হয়নি।’

ভৈরব নদের প্লাবনভূমির সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে অগ্রগতি কী—জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সচিব আমিনুল ইসলাম বলেন, আগামী মাসে সরেজমিনে গিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হবে। কমিটি গঠনের দুই মাসের মধ্যেও কাজ শুরু হলো না কেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘দূরত্বের কারণে একটু গ্যাপ হয়ে গেছে। আপনাকে ধন্যবাদ, বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।’

ভৈরব নদ খনন শুরুর আগে দড়াটানা সেতুর পশ্চিম পাশের ৮৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু পূর্ব পাশের ৮০০ মিটারের মধ্যে কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়নি। আবার ৮০০ মিটারের পর কাঠেরপুল সেতুর আশপাশ ও নীলগঞ্জ সেতুর দুই পাশে আবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এই ৮০০ মিটারের মধ্যে সরকারদলীয় সাংসদ ও প্রভাবশালীদের ২০টির মতো বহুতল ভবন রয়েছে।

দড়াটানা সেতুর পশ্চিমাংশে নদের প্রস্থ ২২০ থেকে ২৫০ ফুট। কিন্তু পূর্বাংশে মাত্র ১৭০ থেকে ১৯০ ফুট। এ কারণে এই অংশে নদের প্রস্থ কমে গেছে। এতে খননকাজ বাধাগ্রস্ত হবে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন বলেন, দড়াটানা সেতুর পূর্ব পাশের নদের দুই তীরে মাটি ফেলার জায়গা নেই। খননযন্ত্র ঘোরানোর মতো পরিস্থিতিও নেই। যে কারণে সেতুর পূর্ব পাশে আড়াই কিলোমিটারে আপাতত কাজ করা যাচ্ছে না।