মোংলা বন্দরে বহনযোগ্য থার্মাল স্ক্যানার

মোংলা বন্দরের জেটিতে প্রবেশ এবং বের হওয়ার সময় বহনযোগ্য থার্মাল স্ক্যানার ‌দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা ছবি। প্রতিনিধি, মোংলা, বাগেরহাট
মোংলা বন্দরের জেটিতে প্রবেশ এবং বের হওয়ার সময় বহনযোগ্য থার্মাল স্ক্যানার ‌দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা ছবি। প্রতিনিধি, মোংলা, বাগেরহাট

করোনাভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবিলায় মোংলা বন্দরের জেটির প্রবেশমুখে একটি বহনযোগ্য থার্মাল স্ক্যানার বসানো হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন পোর্ট হেলথের একটি দল সার্বক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কাজ করছে। তারা বন্দরে আসা বিদেশি জাহাজ, যেটি বহির্নোঙরে আছে, সেখানে গিয়ে বিদেশি নাবিকদের আরেকটি বহনযোগ্য থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা করছে।

মোংলা বন্দর হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক মো. আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমরা করোনাভাইরাসের সংক্রমণঝুঁকি এড়াতে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন পোর্ট হেলথের সদস্যদের সুস্থতার ছাড়পত্র ছাড়া ওই জাহাজে আমরা দেশি শ্রমিকসহ কাউকেই উঠতে দিচ্ছি না। এ ছাড়া বন্দর হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সসহ ছয় সদস্যের একটি টিম সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

আবদুল হামিদ বলেন, করোনায় আক্রান্ত রোগীর জন্য হাসপাতালের দুটি আইসোলেটেড কক্ষ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বহন বা আক্রান্ত ব্যক্তিকে যাতে দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা যায়, সেই লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে জরুরি বিভাগের একটি অ্যাম্বুলেন্স।

করোনাভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবিলায় মোংলা উপজেলা প্রশাসন ও মোংলা বন্দরে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষামূলক উপকরণ যেমন: গাউন, মাস্ক ও অন্যান্য উপকরণের অপ্রতুলতা রয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ঝুঁকি ও প্রতিরোধবিষয়ক ৩ মার্চ উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে ১০ সদস্যের এই কমিটিতে উপদেষ্টা রাখা হয়েছে স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত সব নির্দেশনা ঠিকমতো চলছে কি না, তা পর্যবেক্ষণে ইতিমধ্যে আমরা দুটি মিটিংও করেছি। করোনায় আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য আমরা সাত সদস্যের একটি র‌্যাপিড রেসপন্স টিমও গঠন করেছি।’

জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, ‘আক্রান্ত রোগীর জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় দুটি আইসোলেশন কক্ষ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কক্ষ দুটিতে দুজন পুরুষ এবং দুজন নারী চিকিৎসা নিতে পারবেন। এ ছাড়া করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলে আমরা তাদের জন্য টিএ ফারুক প্রাথমিক বিদ্যালয়কে কোয়ারেন্টাইন হিসাবে প্রস্তুত রেখেছি। এখানে ১০০ রোগী থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেসব চিকিৎসক ও নার্স করোনা বিষয়ে কাজ করছেন, তাঁদের মধ্যে দুজন চিকিৎসক হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। বাকিরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তবে যাঁরা করোনা নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের সুরক্ষামূলক উপকরণ যেমন: মাস্ক, গাউন ও অন্যান্য উপকরণ পর্যাপ্ত নয়।’ পর্যাপ্ত উপকরণ সরবরাহের দাবি জানান তিনি।

মোংলা বন্দরের স্থানীয় শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বন্দরের জেটিতে একটি ডিজিটাল বিল বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে নিয়মিতভাবেই করোনাভাইরাসের বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও সচেতন করার বিষয় দেখানো হচ্ছে। মোংলা ফেরিঘাটে শ্রমিকেরা বিদেশি জাহাজে পণ্য খালাস-বোঝাইকাজে যাওয়ার সময় তাঁদের মাস্ক ও সচেতনতামূলক লিফলেটও বিতরণ করা হচ্ছে।