ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন কাল

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। ছবি: প্রথম আলো

আগামীকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হবে বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করবেন।

এই এক্সপ্রেসওয়ের ঢাকা প্রান্ত থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়ে ধরে এই দূরত্ব অতিক্রম করতে সাধারণভাবে সময় লাগবে মাত্র ৪২ মিনিট। আর ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে যেতে সময় লাগবে ২৭ মিনিট। অবশ্য এখনই ঢাকা থেকে সরাসরি ভাঙ্গা পর্যন্ত যাওয়া যাবে না। পদ্মা সেতু হওয়ার পর এই সুফল ভোগ করা যাবে।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও মুন্সিগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তফা জানান, রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের জুলাই মাসে। ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজ আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিল ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার অংশের কাজ। চলতি মাসে এসে প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হয়।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোট ১১ হাজার ৩কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ হয়। চার লেনের এই এক্সপ্রেসওয়েটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন-এসডব্লিউও (পশ্চিম)। সেতুর দুই পাশে ধীর গতির যানবাহন চলাচলের জন্য সাড়ে ৫ মিটার প্রশস্ত সড়ক রাখা রাখা হয়েছে।

এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচটি ফ্লাইওভারের মধ্যে একটি ২.৩ কিলোমিটার কদমতলী-বাবুবাজার লিংক রোড ফ্লাইওভার রয়েছে। অন্য চারটি ফ্লাইওভার হলো আবদুল্লাহপুর, শ্রীনগর, পুলিয়াবাজার এবং মালিগ্রামে। ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়েতে জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আতাদিতে চারটি রেলওয়ে ওভার ব্রিজ রয়েছে এবং চারটি বড় সেতু রয়েছে যার মধ্যে ৩৬৩ মিটার ধলেশ্বরী -১, ৫৯১ মিটার ধলেশ্বরী -২, ৪৬৬-মিটার আড়িয়াল খান এবং ১৩৬-মিটার কুমার সেতু।

উদ্বোধন উপলক্ষে সেতুর দুই পাশ সাজানো হচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো
উদ্বোধন উপলক্ষে সেতুর দুই পাশ সাজানো হচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে থাকছে বেশ কয়েকটি বাস থামার স্থান (বে)। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংযোগ সড়ক থেকে ঢোকা এবং বের হওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এই এক্সপ্রেসওয়ের অনেকগুলো পয়েন্টে। তাই এটিকে পূর্ণাঙ্গ এক্সপ্রেসওয়ে বলা যাবে না। তবে এক্সপ্রেসওয়ে বা হাইওয়ের অনেকগুলো সুবিধা পাওয়া যাবে এতে। অবশ্য পদ্মা সেতু চালু না হওয়া পর্যন্ত এই সুবিধা পূর্ণাঙ্গভাবে পাওয়া যাবে না।
এই এক্সপ্রেসওয়েতে সব ছোট বড় সব মিলিয়ে সেতুর সংখ্যা হচ্ছে ২৯টি। এক্সপ্রেসওয়ের দুই প্রান্তে দুটি টোল প্লাজা রাখা হয়েছে।

ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সুধীন সরকার জানান, এই এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ার পর এই অঞ্চলের শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থাই নয়, সার্বিক উন্নতি সাধিত হবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পকারখানা স্থাপনে উদ্যোক্তারা আগ্রহী হবেন। এতে আমাদের কর্মসংস্থানও বেড়ে যাবে। সার্বিকভাবে দেশের জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধিতে এই এক্সপ্রেসওয়ে বড় ভূমিকা রাখবে।

ফরিদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুল বারী বলেন, এই এক্সপ্রেসওয়ে হওয়াতে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে এই জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বৈপ্লবিক উন্নতি সাধিত হবে। এই এক্সপ্রেসওয়ের কারণে মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমে যাবে। সড়কের যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা আসবে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, উন্নয়নের প্রথম শর্তই হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হয়েছে। এটি চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হলো। তিনি বলেন, আগে ঢাকা যেতে যে সময় লাগত এখন তার চার ভাগের একভাগ সময় লাগবে। এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হওয়ায় দেশের অর্থনৈতিক খাত সমৃদ্ধ হবে। জনগণও ব্যাপক উপকৃত হবে।