অর্থাভাবে কাজ বন্ধ, খোয়া বিছানো রাস্তায় দুর্ভোগ

সড়ক থেকে খোয়া সরে গেছে। পড়ে আছে বালি। এই চিত্র চিরিরবন্দরের অমরপুর ইউনিয়নের মডেল স্কুল মোড় থেকে রাজাপুর সড়কের।  ছবি: প্রথম আলো
সড়ক থেকে খোয়া সরে গেছে। পড়ে আছে বালি। এই চিত্র চিরিরবন্দরের অমরপুর ইউনিয়নের মডেল স্কুল মোড় থেকে রাজাপুর সড়কের। ছবি: প্রথম আলো

আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার অমরপুর ইউনিয়নের সন্তোষপাড়া থেকে বেলতলী মডেল স্কুল মোড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তায় ইটের খোয়া বিছিয়ে রাখা হয়েছে। খোয়া বিছানো এই রাস্তা যান চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো জায়গায় খোয়া সরে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ঠিকাদার বলছেন, অর্থের সংকুলান নেই, তাই কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে।

শুধু সন্তোষপুর থেকে বেলতলী সড়কই নয়, উপজেলার বেশ কয়েকটি রাস্তার অবস্থাও একই। আবদুলপুর ইউনিয়নের হাফেজের মোড় থেকে আবদুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ফটক পর্যন্ত এক কিলোমিটার, একই ইউনিয়নের বেকীপুল বাজার থেকে বৈদেশীর হাট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার, অমরপুর ইউনিয়নের বলাই বাজার থেকে বাঁশপুকুর পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার, ভূষিরবন্দর থেকে কালীতলা বাজার পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এবং উপজেলা শহরের অন্যতম রাস্তার ঘুঘড়াতলী মোড় থেকে শিমুলতলী পর্যন্ত দুই কিলোমিটারের বেশি রাস্তায় এভাবে ইটের খোয়া ফেলে রাখা হয়েছে। আত্রাই নদের বিভিন্ন জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করে বালুবাহী অর্ধশতাধিক ট্রাক্টর প্রতিদিন ৪-৫ বার এসব রাস্তায় চলাচল করে। এতে আরও বেশি বেহাল হয়ে পড়েছে রাস্তাগুলো।

ঘুঘড়াতলী থেকে আমতলী পর্যন্ত রাস্তার দৈর্ঘ্য ১৫ কিলোমিটার। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের আওতাধীন এই রাস্তা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে সংস্কার করা হয়নি। এর মধ্যে ঘুঘড়াতলী থেকে শিমুলতলী পর্যন্ত দুই কিলোমিটার উপজেলা শহরের মূল রাস্তা। রাস্তার দুই পাশে বাজার। শহরের আশপাশে ৩০টির বেশি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে রাস্তায় ধুলা আর বর্ষা মৌসুমে বড় বড় গর্ত আর কাদার সৃষ্টি হয়। এই সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে শহরবাসীকে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তির শেষ নেই।

সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান জানান, এই ১৫ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমতলী বাজার থেকে রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। পাঁচটি কালভার্টের কাজ চলমান রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অমরপুর ইউনিয়নের বলাইবাজার এলাকার বাসিন্দা গণেশ রায় বলেন, ‘দুই বছর হয়্যা গেইল রাস্তাত খোয়া ফেলি রাখিছে। কোন কোন জায়গাত খোয়া সরি যায় গর্ত হয়্যা গেইসে। গেল বর্ষাত এলাকার মানুষগিলার ভোগান্তি হইছে। সামনে আরহ বর্ষা আইসোছে। এইবার তো রাস্তার অবস্থা আরহ খারাপ হয়্যা গেইসে।’

এই কাজের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরএ এন্টারপ্রাইজের মালিক রবিউল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিভিন্ন সময়ে চিরিরবন্দর উপজেলার ১৫ কিলোমিটার রাস্তার কাজের কার্যাদেশ পেয়েছেন তিনি। প্রথম ধাপে কাজের বিল দাখিল করে পেয়েছেন মাত্র ১৩ শতাংশ টাকা। অর্থ না পেলে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। শুধু রবিউল ইসলামই নন, যোগাযোগ করা হলে সব রাস্তার ঠিকাদারই একই কথা বলেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) চিরিরবন্দর উপজেলা কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এই উপজেলায় সড়ক রয়েছে ১২৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা রাস্তা ১১০ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার। ইউনিয়ন সড়ক ৮৬ দশমিক ৯৯ কিলোমিটার। ইউনিয়ন সড়কের মধ্যে পাকা রাস্তা ৩২ দশমিক ৫১ কিলোমিটার এবং গ্রামীণ ‘এ’ ও ‘বি’ শ্রেণির সড়ক রয়েছে ৫৭৯ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার। যেখানে পাকা রাস্তা ৪৯ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার। এই তিন শ্রেণিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বিভিন্ন সময়ে ৩৪টি গুচ্ছে মোট ৫১টি রাস্তার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১০২ দশমিক ৬০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। এই কাজের চুক্তিমূল্য ৩৮১ কোটি ২১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

এলজিইডির জেলা কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী রেজাউর রহমান বলেন, মোট ১৩টি প্রকল্পের আওতায় দিনাজপুর জেলার ৫৬৩ দশমিক ৯৮৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। তবে রংপুর বিভাগীয় পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-২-এর আওতায় যেসব রাস্তার কাজ হচ্ছে, সেগুলোতে অর্থ সংকুলান না থাকায় কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। আগামী মে মাসের মধ্যে অর্থের সংকট কেটে যাবে এবং পুরোদমে কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।