বিনা ভাড়ায় রোগী নিয়ে যান যে চালকেরা

সপ্তাহের একটি দিন আনোয়ারার সিএনজিচালিত অটোরিকশার আট চালক বিনা ভাড়ায় আনা-নেওয়া করেন রোগীদের।  প্রথম আলো
সপ্তাহের একটি দিন আনোয়ারার সিএনজিচালিত অটোরিকশার আট চালক বিনা ভাড়ায় আনা-নেওয়া করেন রোগীদের। প্রথম আলো

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর ইউনিয়নের খাসখামা গ্রামের আছিয়া খাতুনের (৪৪) হঠাৎ পেট ব্যথা শুরু হলে বিপাকে পড়েন স্বামী আবদুল আলীম। বাড়ির আশপাশে কোনো যানবাহন চোখে পড়ছিল না। ওই সময় এক প্রতিবেশী আবদুল আলীমকে একজন অটোরিকশাচালকের মুঠোফোন নম্বর দেন। ওই নম্বরে ফোন করার ১৫ মিনিটের মধ্যে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে হাজির হন চালক দিলীপ দাশ। তিনি দ্রুত আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান অসুস্থ আছিয়াকে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর দেখতে পান আছিয়ার অ্যাপেন্ডিসাইটিস, অপারেশন করতে হবে। ফলে নিয়ে যেতে হবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দিলীপ তাঁদের নিয়ে আবারও ছুটে চললেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে। হাসপাতালে তাঁদের নামিয়ে দিয়ে কোনো ভাড়া না নিয়ে ফিরে গেলেন আনোয়ারায়। এরপর অপেক্ষা, আর কোনো রোগী ফোন করেন কিনা! ফোন করলেই তাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে তাঁকে। এভাবে সপ্তাহের প্রতি বুধবার সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বিনা ভাড়ায় হাসপাতালে রোগী নিয়ে যান দিলীপ।

দিলীপ উপজেলার হাইলধর ইউনিয়নের খাসখামা গ্রাম ও আশপাশের এলাকা থেকে সপ্তাহে এক দিন রোগীদের হাসপাতালে দিয়ে যান বিনা ভাড়ায়। ২০১৪ সালের ২৬ মার্চ থেকে দিলীপ এভাবে বিনা ভাড়ায় রোগী আনা–নেওয়ার কাজটা শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর দেখাদেখি আনোয়ারার বিভিন্ন গ্রামের আরও সাতজন অটোরিকশাচালক বিনা ভাড়ায় রোগী আনা নেওয়া শুরু করেছেন। এই আটজনের সবার গাড়ির সামনে পেছনে লাগানো আছে রঙিন ব্যানার। সেখানে চালকের ছবি, মুঠোফোন নম্বর ও কোনো জায়গা থেকে রোগী বহন করা হয় এসব লেখা আছে। সবার ব্যানারে চালকের পাশাপাশি দিলীপ দাশের ছবিও রেখেছেন তাঁরা। কারণ দিলীপই তাঁদের নৈতিকতার শিক্ষক।

দিলীপের দেখাদেখি বরুমচড়া গ্রামের মারুফুল ইসলাম ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে বরুমচড়া গ্রামের রোগী হাসপাতালে আনা–নেওয়া করেন। এরপর তাঁদের দলে যোগ দেন আরও সাতজন। এদের মধ্যে মোহাম্মদ আবদুল আলীম শুক্রবারে, রিপন কান্তি নাথ মঙ্গলবার, মোহাম্মদ নাজিম সোমবার, গোবিন্দ সেন শনিবার, রূপন সেন সোমবার ও মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির রানা বৃহস্পতিবার রোগী আনা–নেওয়া করেন। আটজনেরই বৈধ কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। তাঁদের মধ্যে দুজন অন্যের অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে চালালেও ছয়জনের অটোরিকশা নিজের মালিকানার। তারপরও মাঝেমধ্যে ভোগান্তিতে পড়তে হয় বলে জানান অটোরিকশাচালক রূপন সেন। মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির রানা বলেন, ‘মানুষ হয়ে মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। কিন্তু আমি তো গরিব লোক। তাই বিনা ভাড়ায় রোগী নিয়ে যাই হাসপাতালে। এটি করে মানসিক শান্তি পাই।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু জাহিদ মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন বলেন, ‘আটজন অটোরিকশাচালক সপ্তাহে এক দিন হাসপাতালে রোগী আনা–নেওয়া করেন এটা প্রশংসনীয়।’

আনোয়ারা ইউএনও শেখ জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘এটা সত্যিকার অর্থে একটা মহৎ উদ্যোগ। এভাবে পরিবর্তন আসবে সমাজে।’