বিদেশি মুদ্রা রাখার মামলায় খালেদ কারাগারে

খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। ফাইল ছবি
খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। ফাইল ছবি

বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণের মামলায় ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এই আদেশ দেন।

চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে ঢাকার সিএমএম আদালতে বৃহস্পতিবার হাজির করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তারের পর থেকে তিনি বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আছেন।

সিআইডি এক প্রতিবেদন দিয়ে বলছে, গত সোমবার থেকে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অবৈধভাবে বিদেশি মুদ্রা রাখার কথা স্বীকার করেন। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করার সময় খালেদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা জব্দ করা হয়। গত বছরের ৩ নভেম্বর ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ খালেদের কাছ থেকে জব্দ করা দেশি-বিদেশি মুদ্রা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশ ব্যাংকের পাবলিক অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্ট এ রাষ্ট্রের অনুকূলে স্থায়ীভাবে জমা দেওয়া হয়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রা রাখার অভিযোগে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে সিআইডি গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনে রাজধানীর গুলশান থানায় একটি মামলা করে। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার গুলশানের বাসায় অভিযান চালায়। ওই বাসা থেকে ছয়টি দেশের মুদ্রা জব্দ করা হয়। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরের ১০ হাজার ৫০ ডলার, থাইল্যান্ডের ১০ হাজার ৪৯০ বাথ, ভারতীয় সাড়ে তিন হাজার রুপি, সৌদি আরবের দুই হাজার ৩২১ রিয়াল, মালয়েশিয়ান ৬৫৬ রিঙ্গিত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৭৫ দিরহাম রয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়—খালেদ মাহমুদের পাসপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তার স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ডেবিট কার্ডে মার্কিন ডলার এনডোর্সমেন্ট করা থাকলেও নগদ কোনো বিদেশি মুদ্রার এনডোর্সমেন্ট নেই। বিদেশি মুদ্রা লেনদেন করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে কোনো অনুমতি নেননি বলে তদন্তকালে জানা যায়। সিআইডির পরীক্ষায় দেখা যায় জব্দ করা মুদ্রাগুলো আসল।

পুলিশ ও আদালত সূত্র বলছে, যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও মুদ্রা পাচার মামলায় ইতিমধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ১৯৯৬ সালে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ঢাকা মহানগর যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। আর ২০১২ সালে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। তখন থেকে খালেদ বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন। ঢাকার মতিঝিলের ইয়ংমেন ক্লাব, আরামবাগ ক্লাবসহ ফকিরাপুলের অনেকগুলো ক্লাবে ক্যাসিনোর আসর বসিয়ে রমরমা মাদক ব্যবসাসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসছিলেন তিনি। এসব অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। খালেদ খিলগাঁও শাজাহানপুর চলাচলকারী গণপরিবহন থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন। কোরবানি ঈদের সময় শাজাহানপুর কলোনি মাঠ, মেরাদিয়া, কমলাপুর, সবুজবাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখান থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করতেন। সরকারি প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে রাজউক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রেলভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ফকিরাপুল সহ বেশির ভাগ এলাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন খালেদ মাহমুদ।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, দুটি অস্ত্রের লাইসেন্সে ৫০ রাউন্ড করে গুলি কেনার হিসেব থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে খালেদের হেফাজত থেকে সাত রাউন্ড শটগানের এবং নয় রাউন্ড পিস্তলের অতিরিক্ত গুলি উদ্ধার করা হয়। এগুলো ২০১৭ সালের পর নবায়ন করা হয়নি। এগুলো অবৈধ অস্ত্র। অবৈধ টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা পরিচালনার জন্য খালেদ ব্যবহার করতেন এসব অবৈধ অস্ত্র। অবৈধ ব্যবসা ও রাজনৈতিক দাপটে পেশি শক্তি প্রয়োগ করার জন্যই দীর্ঘদিন অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করে আসছিলেন। এ ছাড়া জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে খালেদের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলাটি এখন তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে।