যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে নির্যাতন ও গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগ

নারী নির্যাতন। প্রতীকী ছবি
নারী নির্যাতন। প্রতীকী ছবি

যৌতুক না দেওয়ায় স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে নির্যাতন করে গর্ভপাত ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শারমিন আক্তার নামের ওই গৃহবধূকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় শারমিনের মা বাদী হয়ে মামলা করেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই গৃহবধূর স্বামী আতিকুল ইসলামকে (২৮)।

গতকাল বৃহস্পতিবার বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের হস্তীশুণ্ড গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় প্রতিবেশী অন্তত আটজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হস্তীশুণ্ড গ্রামের আজাহার আলী সিকদারের ছেলে আতিকুল ইসলামের (২৮) সঙ্গে পার্শ্ববর্তী বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠী গ্রামের হেমায়েত ফকিরের মেয়ে শারমিন আক্তারের (২০) প্রেম হয়। এক বছর আগে শারমিন পরিবারের অমতে আতিকুলকে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন যেতেই আতিকুল ও তাঁর পরিবারের লোকজন শারমিনের বাড়ি থেকে যৌতুক আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এতে শারমিন রাজি না হওয়ায় তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহজাহান হাওলাদার বলেন, এ নিয়ে কয়েকবার সালিস করে মীমাংসা করা হয়েছে।

গতকাল দুপুরে হাসপাতালে শারমিন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি বাবা মায়ের অমতে আতিকুলকে বিয়ে করে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে স্বামী ও স্বামীর পরিবারকে আঁকড়ে থাকতে চেয়েছি। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন যাওয়ার পরেই বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক আনার জন্য তারা আমাকে চাপ দেয়। আমি রাজি না হওয়ায় গত ৬মাস ধরে আমাকে শারীরিক নির্যাতন করে আসছিল, এমনকি আমার গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করার পাঁয়তারা করছিল । এতে আমি রাজি না হওয়ায় নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। গত বুধবার রাতে আতিকুল ও তাঁর বাড়ির লোকজন আমাকে বেদমভাবে মারধর করে পেটে লাথি দিয়ে সন্তান নষ্টের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে একপর্যায়ে জোর করে গর্ভপাতের ওষুধ খাওয়ায়। এতে আমি অসুস্থ হয়ে পরলে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় মৃত সন্তান প্রসব করি। পরে চিকিৎসা না দিয়ে আমাকে ঘরে মধ্যে আটকে রাখে।’

এলাকাবাসী জানান, বিষয়টি উজিরপুর মডেল থানাকে জানালে গতকাল দুপুরে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন গৃহবধূ শারমিনকে উদ্ধার করে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি ঘটলে বিকেলে তাঁকে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শওকত আলী বলেন, তাঁকে (শারমিন) কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট না দেখে কিছু বলা যাবে না। তবে উপসর্গ দেখে মনে হচ্ছে ওষুধ দিয়ে তাঁর গর্ভপাত ঘটানো হয়েছে।

আতিকুলের মা মরিয়ম বেগম নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হয়েছে। তবে মারধরের ও সন্তান নষ্টের অভিযোগ সত্য নয়।

উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল আহসান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে আহতকে শারমিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় শারমিনের মা সোনিয়া বেগম বাদী হয়ে জামাতা আতিকুল ইসলাম (২৮), তাঁর বোন পারভীন বেগম (৩৬), মরিয়ম বেগম (৪০), ভাগনি ইশাত (২৫)এর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০ জনকে আসামি করে উজিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই রাতেই পুলিশ আতিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।