পুলিশ নির্যাতনে আলতাফের মৃত্যুর অভিযোগ তদন্ত হবে

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তার নির্যাতনের কারণে আলতাফ আলীর মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে পুলিশ। এ লক্ষ্যে ময়মনসিংহের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীরকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কাল রোববার থেকে কমিটি তদন্ত শুরু করবে।

পুলিশের ভাষ্য, আলতাফ আলীর মৃত্যুর পর মুক্তাগাছা থানায় কর্মরত দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের পর টাকা দাবি, নির্যাতন ও থানায় আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। তিনটি অভিযোগের মধ্যে নির্যাতন ও থানায় আটকে রাখার অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। তবে টাকা দাবির বিষয়টি পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করবে।

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মো.আহমার উজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকা দাবির অভিযোগটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত হবে। আমরা এ অভিযোগে তাঁদের প্রত্যাহার করেছি। তবে থানায় আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগটি মোটেও সত্য নয়। আসামিকে যথাসময়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ওই সময় আসামি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। পরে গত বৃহস্পতিবার তাঁর (আলতাফ আলী) স্ট্রোক হলে তিনি মারা যান বলে জেনেছি।

আলতাফ আলীর (৪০) বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার জামগড়া গ্রামে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা যান। তাঁর পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তাগাছা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল খায়ের ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল হামিদকে রাতেই পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয়।

মুক্তাগাছা থানা-পুলিশ বলেছে, আলতাফ বনের গাছ কাটা এবং ডলার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে এসব অপরাধসহ বিভিন্ন অভিযোগে চারটি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি তিনি ত্রিশালের এক ব্যক্তির কাছে সরকারি কিছু গাছ বিক্রি করেন। ক্রেতা গাছ নিতে গিয়ে জানতে পারেন, ওই সব গাছ সরকারি। তিনি গাছ কিনতে অস্বীকৃতি জানালে আলতাফ তাঁর কাছ থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনায় ওই ব্যক্তি মুক্তাগাছা থানায় মামলা করলে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আলতাফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ৫ মার্চ আলতাফ জামিনে মুক্তি পান। এরপর বৃহস্পতিবার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যান।

আলতাফের পরিবারের অভিযোগ, আলতাফকে থানায় নিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করে মারধর করেন এসআই আবুল খায়ের ও এএসআই আবদুল হামিদ। এরপর থেকেই তিনি অসুস্থ বোধ করছিলেন। বৃহস্পতিবার বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। পরে বাবার লাশ নিয়ে আলতাফের ছেলে (১২) ও ভাতিজা রূপ চান (২৫) সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে রাতে চলে যান ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সামনে। সেখানে পুলিশের নির্যাতনের অভিযোগ করে বাবার হত্যার বিচার দাবি করে আলতাফের ছেলে।

আলতাফ আলীর ভাতিজা রূপ চানের দাবি, আলতাফ আলীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশের ওই দুই কর্মকর্তা তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করে। দুই কর্মকর্তা আলতাফকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৮৫ হাজার টাকা দাবি করেন। এর প্রমাণও তাঁর কাছে আছে।

রূপচান আরও জানান, আলতাফ আলীর মৃত্যুর পর তাঁরা বিচার না পাওয়ার শঙ্কা থেকেই ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সামনে লাশ নিয়ে যান। মৃত্যুর পর অনেকেই থানায় লিখিত অভিযোগ করার পরামর্শ দিলেও তাঁরা ভয়ে থানায় যেতে সাহস পাচ্ছেন না।