করোনা নিয়ে বাংলাদেশের পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে ইউরোপের দেশগুলো

করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ নিয়ে বিদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ছবি: প্রথম আলো
করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ নিয়ে বিদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ছবি: প্রথম আলো

বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণের পর বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এই প্রেক্ষাপটে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কী, তা জানতে চেয়েছেন ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত। আর করোনাভাইরাস সংক্রমিত দেশ থেকে বাংলাদেশে ফেরার পর কোয়ারেন্টিন থেকে পালানো ব্যক্তিদের নিয়ে সরকার কী করছে, ঢাকায় নরওয়ের রাষ্ট্রদূত তা জানতে চেয়েছেন।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে তাঁরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী করোনাভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ নিয়ে বিদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের জানান।

এরপর যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও নরওয়ে—এই চার দেশের শীর্ষ কূটনীতিকেরা সুনির্দিষ্ট চারটি বিষয় জানতে চান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।
ব্রিফিংয়ের শুরুতে এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সবাই মিলে যেকোনো সময় করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে পারব। কাজেই এখন আমাদের ঐকবদ্ধ থাকতে হবে। একে অন্যকে সহযোগিতা করতে হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য ওই দেশগুলোর সহযোগিতা চান। বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কূটনীতিকদের আশ্বস্ত করেছেন বাংলাদেশ নিজের নাগরিকদের মতোই সমান গুরুত্ব দিয়ে বিদেশিদের দেখভাল করবে।
প্রশ্নোত্তরের শুরুতেই ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি জানতে চান। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের ব্যাপারে সরকার যথেষ্ট সতর্ক রয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা শিবিরে একজনও আক্রান্ত হননি।
ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত রেনসে টেরিঙ্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, বাংলাদেশে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা স্থানীয়ভাবে হননি। তবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কী?

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মোট আটজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সাতজনই বিদেশ থেকে আসা। তাঁদের সবাই আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশি। কাজেই স্থানীয়ভাবে একজন যে হয়েছেন, সেটাও বিদেশ থাকা আসা লোকের সংস্পর্শে গিয়ে। এখন পর্যন্ত আমরা ভাগ্যবান। কিন্তু এ মুহূর্তে নিজেদের জনগণের সুরক্ষার স্বার্থে আমরা আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ওপর বিধিনিষেধ দিয়েছি। করোনাভাইরাসে ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে ওই সব দেশ থেকে উড়োজাহাজে যাত্রী আনা বন্ধ রেখেছি। আর যাঁরা দেশে ফিরছেন, তাঁদের বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে পাঠাচ্ছি। ধরুন ইতালি থেকে কেউ দেশে এসেছেন। তাঁদের চিকিৎসা দিয়ে কোয়ারেন্টিনে নিচ্ছি।’

নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিসেল ব্লিকেন মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যমে জেনেছি কিংবা গুজবও হতে পারে কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হয়েছে এমন লোকজন পালিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। তাহলে সেলফ কোয়ারেন্টিনের বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত করবেন? এটি কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণও।’

এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরা একটি কৌশল বের করার চেষ্টা করছি। আমাদের জেলা প্রশাসন, স্থানীয় পর্যায়ে নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিদেশ থেকে কেউ এলেই তাকে কোয়ারেন্টিনে যেতে হবে। গতকাল একজন বের হয়ে এসেছিলেন। পরে ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে জরিমানা করে বাড়িতে আবার কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছেন। আমরা কঠোরভাবে কোয়ারেন্টিনের বিষয়টি কার্যকর করব। এ ব্যাপারে এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করা হয়েছে।’
এ সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘যেসব যাত্রী দেশে ফিরছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই নাম, ঠিকানা, সিট নম্বর, ফ্লাইট নম্বর, কোথা থেকে ফিরছেন—এ তথ্যগুলো যুক্ত করে একটি আবেদনপত্র পূরণ করে বিমানবন্দরে জমা দিচ্ছেন। কাজেই কেউ যদি পালিয়ে গিয়ে থাকেন, তাঁকে খুঁজে বের করে সেলফ কোয়ারেন্টিনে আনা যায়, এ জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের কাছে সেই অনুযায়ী তালিকা দিতে পারি, সেটি নিশ্চিত করতে এটি করা হচ্ছে।’

জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো জানতে চান বিদেশি নাগরিকদের বাংলাদেশে আসতে হলে সনদ দেওয়ার বাধ্যবাধকতার কথা বলা হচ্ছে। এটি কী ধরনের সনদ? এ প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ৮৪ দেশের নাগরিকদের আগমনী ভিসা দিয়ে থাকি। তাঁদের সবার জন্য ভিসা স্থগিত করা হয়েছে। আমরা চিকিৎসা সনদ ছাড়া কোনো ভিসা দিচ্ছি না।’
চিকিৎসা সনদের ধরনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খলিলুর রহমান বলেন, চিকিৎসা সনদে এটা নিশ্চিত করতে হবে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন। এবং ভিসা প্রার্থী ব্যক্তি ওই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়ার মতো অবস্থায় যাননি।

অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে অতিথিরা কেক কাটেন এবং বেলুন ওড়ান।