পুরোনো চেহারায় ফিরছে বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক বাড়ি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পৈতৃক বাড়িটি পুরোনো আদলে ফিরিয়ে আনার কাজ চলছে। গত বুধবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়।  প্রথম আলো
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পৈতৃক বাড়িটি পুরোনো আদলে ফিরিয়ে আনার কাজ চলছে। গত বুধবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। প্রথম আলো

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় তাঁর পৈতৃক বাড়িটি পুরোনো রূপে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে গত নভেম্বর থেকে কাজ শুরু হয়েছে।

বর্তমানে বাড়িটির দেয়াল থেকে পলেস্তারা সরিয়ে পুরোনো আদলে পলেস্তারা করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে এ কাজ চলছে।

বাড়িটির সংস্কার ও সংরক্ষণকাজের অগ্রগতি দেখতে ৮ মার্চ সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ পরিদর্শন করেন। এ সময় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হান্নান মিয়া, উপপরিচালক মো. আমিরুজ্জামান, সহকারী প্রকৌশলী ফিরোজ আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরিদর্শনকালে কে এম খালিদ বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শিশুকাল থেকে বেড়ে ওঠার যেসব জায়গা রয়েছে, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মাধ্যমে সেগুলো আদিরূপে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগে একবার বঙ্গবন্ধুর বাড়ি সংস্কার করা হলেও তা আঞ্চলিক আইন মেনে করা হয়নি। বঙ্গবন্ধুর আদি বাড়িটি যেমন ছিল, সেই জায়গাতেই ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সংস্কৃতিবিষয়ক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৩৬০ বছর আগে তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বসতি স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষেরা। বর্তমান বাড়িটি নির্মাণ করেন বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষ জমিদার শেখ কুদরতউল্লা। সেগুনকাঠের তৈরি বাড়িটিতে অত্যাধুনিক কারুকাজের ১২টি পিলার রয়েছে।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ এ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে এ বাড়িতেই।

স্থানীয় লোকজন বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অনেক ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার পর দীর্ঘদিন বাড়িটি অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বাড়িটি সংস্কার করা হয়। ৮ বছর আগে জরাজীর্ণ বাড়িটি আবারও সংস্কার করা হলে তখন এর কাঠামোগত পরিবর্তন হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নভেম্বরে থেকে চুন, সুরকি, চিটা গুড়ের সঙ্গে সিমেন্ট ও বালু দিয়ে কাজ শুরু হয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের উপপরিচালক আমিরুজ্জামান পলাশ ও সহকারী প্রকৌশলী ফিরোজ আহমেদ কাজটির তত্ত্বাবধান করছেন।

জানতে চাইলে ফিরোজ আহমেদ বলেন, প্রায় ৮ বছর আগে একবার প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বাড়িটি সংস্কার করে। এতে বাড়িটির পুরোনো আদলে বেশ পরিবর্তন আসে। বাড়িটি আবার পুরোনো রূপে ফিরিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়। 

এরপর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রকৌশলীরা টুঙ্গিপাড়া এসে বাড়ির পুরোনো ছবি ও ভবনের নির্মাণশৈলী দেখে পুরোনো আদলে ফিরিয়ে দিতে একাধিক নকশা করেন। এগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখানো হয়। প্রধানমন্ত্রী নকশার আদলে বাড়িটি সংস্কার করার অনুমতি দেন। সে অনুযায়ী বাড়িটি পুরোনো চেহারায় ফিরিয়ে আনার নমুনাকাজ চলছে। এ নমুনা আবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। সেটি দেখে অনুমোদন দিলেই চূড়ান্ত কাজ করা হবে।