নারায়ণগঞ্জে ৫ হাজারের মধ্যে কোয়ারেন্টিনে ২৬

বিদেশ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলায় ফিরে এসেছেন ৫ হাজারের বেশি প্রবাসী, কিন্তু তাঁদের মধ্যে মাত্র ২৬ জন বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। তাঁদের অনেকেই কোয়ারেন্টিনের নীতি মেনে চলছেন না।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কতজন প্রবাসী জেলায় ফিরে এসেছেন, সেই তথ্য তাদের কাছে নেই। প্রবাসীরা বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে (পৃথক কক্ষে থাকা) না থাকলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ কারণে গতকাল মঙ্গলবার করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির জরুরি সভায় প্রবাসীদের তথ্য পেতে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত কমিটি করা হয়েছে। 

এদিকে জেলায় করোনাভাইরাস পরীক্ষার কোনো কিট (সরঞ্জাম) নেই। এ ছাড়া জেলার দুটি সরকারি হাসপাতালের মধ্যে একটিতে (১০০ শয্যার নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল) স্বল্পসংখ্যক পিপিই (পারসোনাল প্রোটেক্টটিভ ইক্যুইপমেন্ট—গ্লাভস, মাস্ক, গাউন, জুতা) রয়েছে। 

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরে আলম প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ১ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ১৩৯ জন প্রবাসী জেলায় ফিরে এসেছেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদেশ থেকে ফেরা অনেকে বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে না থেকে পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে মেলামেশা করেছেন। এতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা সবাই করোনাভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। শুধু স্বাস্থ্য বিভাগের একার পক্ষে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়, সব বিভাগের সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।’ 

নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ প্রথম আলোকে জানান, ১০ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩১ জনকে বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে প্রবাসী ২৬ জন। জেলায় ৫ হাজারের বেশি প্রবাসী ফেরত আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই তথ্য আমাদের কাছে নেই। প্রবাসীরা হোম কোয়ারেন্টিনে না থাকলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে।’ 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৯, ১৩ ও ১৫ মার্চ তিন ব্যক্তি ইতালি থেকে দেশে ফেরেন, কিন্তু তাঁদের কেউ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে না থেকে এলাকায় ঘোরাফেরা করছেন। এ রকম আরও বেশ কয়েকজনের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তাঁরা দাবি করেছেন, তাঁরা কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন। 

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যেখানেই খবর পাচ্ছি, সঙ্গে সঙ্গে প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বাধ্য করছি। তবে অনেকেই হোম কোয়ারেন্টিন নীতি মানছেন না। আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ 

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রফিউর রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা বিদেশ থেকে ফিরছেন, তাঁদের নিজের পরিবার–পরিজন, আত্মীয়স্বজন ও দেশের স্বার্থে স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা উচিত। জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে সিভিল সার্জনের বিষয়টি মনিটরিং (তদারকি) করা উচিত। এর ব্যত্যয় হলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। 

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জেলা কমিটির সদস্যসচিব ও জেলা সিভিল সার্জন ইমতিয়াজ বলেন, ‘আমরা মঙ্গলবার জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি জরুরি সভা করেছি। ওই সভা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণমান্য ব্যক্তি ও গ্রাম পুলিশের সদস্যদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তাঁরা বিদেশফেরতদের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে তথ্য দেবেন। সেই তথ্য নিয়ে প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো ও থাকা মনিটরিং করা হবে।’ 

সিভিল সার্জন আরও জানান, তাঁদের কাছে যে পরিমাণ পিপিই আছে, তা দিয়ে ২০ থেকে ২৫ দিন চালিয়ে নিতে পারবেন। তাঁদের আরও পিপিইর প্রয়োজন পড়বে।