নালা পরিষ্কার করতে না পারলে আত্মহত্যা করেন: এলজিআরডি মন্ত্রী

সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। ছবি: পিআইডি
সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। ছবি: পিআইডি

ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় নালাগুলোর পরিচ্ছন্নতা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি সিটি করপোরেশনের কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যাদের ড্রেন পরিষ্কার করার কথা, যাদের ইন্সপেকশন (পরিদর্শন) করার কথা, ভোরবেলা দেখার কথা কোথায় সুইপাররা কাজ করেছে, কোথায় করে নাই, তারা সেগুলো করছে কি না।

আজ এক সভায় সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘এসব কথা যদি আপনাদের কাছে খারাপ লাগে, তাহলে ভাই কথা বলে কোনো লাভ নাই, তাহলে আত্মহত্যা করেন, এটাই সবচেয়ে ভালো।’ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, তাঁদের পরিদর্শকেরা সিটি করপোরেশনের নিজস্ব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নিয়মিত কাজের অগ্রগতি জানান।

আজ বুধবার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে আয়োজিত সভায় ঢাকা ওয়াসা, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, রাজউক, মেট্রোরেল, গৃহায়ণ, রাজউক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সভায় সংস্থাগুলো আসন্ন বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিরসনে তাদের প্রস্তুতি তুলে ধরে।

দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কর্মকর্তাদের কাছে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের প্রশ্ন, ঢাকায় অস্তিত্ব আছে, এমন খালের সংখ্যা আসলে কত? যেসব খাল আছে, সেগুলোর মালিক কে? রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কার? মন্ত্রী বলেন, ‘খালগুলোর কোনো মা-বাপ নাই। ওয়াসাকে বললে বলে, এটা আমার না। সিটি করপোরেশনকে বললে বলে, এটা ওয়াসার। এমন খেলা চলতে পারে না।’

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় বেশ কয়েকটি সংস্থার খাল আছে। কতগুলো খাল, কোনটা কার, এগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণ ও দখল রোধ এবং নাব্যতা বাড়াতে গত বছর যে মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তাতে ৩৯টি খালকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তালিকায় খাল ৫০টি। তিনি মহাপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত খালের তালিকা এবং জেলা প্রশাসনের তালিকা মিলিয়ে অস্তিত্ব রয়েছে এমন খালের একটি সুনির্দিষ্ট তালিকা করার নির্দেশ দেন।

মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ চলছে যেসব এলাকায়, সেখানে জনদুর্ভোগ হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রকল্প এলাকায় সড়ক খুঁড়ে মাটি সড়কের পাশে ফেলে রাখা হয়। যানবাহন চলাচলে সমস্যা হয়। এই সড়কের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতের দায়িত্ব যার, তারা দায়িত্ব এড়াতে পারে না।

মন্ত্রী বলেন, ‘রেসপনসিবিলিটি শিফটিংয়ের (দায়িত্ব এড়ানোর) মানসিকতা খুব খারাপ জিনিস। দরকার হলে পায়ে ধরে মাফ চাব, কিন্তু দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপাব না। দায়িত্ব অন্য কারও ওপরে চাপিয়ে দেওয়ার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম বলেন, পল্লবী থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত সড়কটি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত সড়কের যাবতীয় দায়িত্ব মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের। জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘উনারা কাজ করবেন, তাই আপনারা দেখভাল করবেন না? আইন অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব আছে। আপনি যদি তাকে (মেট্রোরেল) বলে থাকেন, জনদুর্ভোগের জন্য তাঁর দায় নেই, তাহলে আর কী বলার আছে। এখানে জনগণের দোষ কী?’

সভায় উপস্থিত মেট্রোরেলের প্রতিনিধি জানান, তিন থেকে চারবার দৈনিক পানি দেওয়া হচ্ছে। সড়কের মাঝে ১১ মিটার জায়গায় কাজ করা হচ্ছে। সড়কটি সার্বক্ষণিক যানবাহন চলাচল উপযোগী রাখতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সভায় ঢাকা ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম সহীদ উদ্দিন বলেন, এবারের বর্ষার আগে ওয়াসার অধীনে থাকা ২৬টি খালের মধ্যে ২৪টি খালের পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো হবে। বক্স কালভার্ট, পাইপলাইনগুলো পরিষ্কার করা হবে। গত কয়েক বছরের মতো জলাবদ্ধতার তিক্ত অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি এবার হবে না বলে মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।