করোনা-আতঙ্ক: হাসপাতাল থেকে ফেরত দেওয়ার অভিযোগ আসছে

জ্বর, কাশি, সর্দির সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে গেলে কোনো কোনো হাসপাতাল চিকিৎসা না দিয়ে রোগীকে ফিরিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আবার করোনা সন্দেহ হলে কোনো কোনো হাসপাতাল রোগীকে অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

বাড্ডার এক বাসিন্দা তিন দিন ধরে জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত। তিনি দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। গতকাল বুধবার ৩৫ বছরের এই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি বিদেশফেরত নই এবং আমার পরিচিত কেউ বিদেশ থেকে আসেনি বারবার বলার পরেও কেউ চিকিৎসা দিচ্ছিল না। চিকিৎসকেরা এভাবে ফিরিয়ে দিতে পারেন না।’

দেশের বড় দুটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই প্রতিবেদককে বলেছেন, তাঁরা করোনায় আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির চিকিৎসা করাবেন না। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশ মোতাবেক হাসপাতালে পৃথক ইউনিট রাখা হতে পারে।

রোগীদের এই হয়রানির অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে সরকারের মুখপাত্র অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, হাসপাতালে রোগী পাঠালে তাঁর চিকিৎসা নিশ্চিত করাই এখন অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। শুধু সরকারি হাসপাতাল নয়, প্রাইভেট হাসপাতালেও একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানে উচ্চপর্যায় থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাস নিয়ে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এ পরিচালক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকদের মধ্যে একধরনের ভীতি থাকতে পারে, এ ধরনের রোগীর সংস্পর্শে গেলে কী হবে। তাঁদের উৎসাহিত করার ব্যবস্থা নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। অনেক সীমাবদ্ধতা থাকার পরেও সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এই হাসপাতালে সারা দেশ থেকে মানুষ আসে। এখানে করোনা রোগীর চিকিৎসা দিলে তা অন্য রোগীদের ঝুঁকি বাড়াবে। বরং তিনি পরামর্শ দেন বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে করোনা রোগীদের পৃথক চিকিৎসার ব্যবস্থা করার।

নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স বলেন, তাঁদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত না করা হলে তাঁরা এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

এই হাসপাতালে গতকাল বুধবার দুপুরে দেখা যায়, দোতলায় করিডরের পাশের ফাঁকা স্থানে চেয়ার-টেবিল পেতে, ব্যান্ডেজ দিয়ে সীমানা বানিয়ে হাঁচি, সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীরা দূর থেকেই তাঁদের সমস্যার কথা বলছেন এবং চিকিৎসকেরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন।

দেশে করোনা শনাক্তের পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই ধরনের রোগীকে পৃথক চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে, যা ওয়ান–স্টপ সার্ভিস নামে পরিচিত। এখানে সকাল ৮টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ১০ টাকার টিকিটের বিনিময়ে চিকিৎসা নেওয়া যায়। গত সোমবার এখানে ৬০ ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছেন। গতকাল দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত ২৩ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এই হাসপাতালে গতকাল ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৪২ জন।

এখানকার চিকিৎসকেরা বলছেন, সব বয়সীরাই চিকিৎসা নিতে আসছে। বেশির ভাগই জ্বর, কাশি, সর্দি নিয়ে আসছে। কারও শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলেও কেউ সরাসরি নিউমোনিয়া নিয়ে আসেনি। তবে তাঁদের কেউ বিদেশ থেকে এসেছেন বা পরিবারের কেউ বিদেশ থেকে এসেছেন বলে জানা যায়নি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পর্যন্ত করোনা সন্দেহে তিনজনকে নমুনা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। তবে তাঁরা কেউ করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না।

সেবা দেওয়া দুই নারী চিকিৎসক ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) দিয়ে নিজেদের সুরক্ষিত রেখেছেন। তবে টিকিট বিক্রিতে জড়িত ব্যক্তিদের হাতে গ্লাভস বা অন্য কোনো সুরক্ষাসামগ্রী ছিল না। অথচ তাঁরা রোগীদের টিকিট দিচ্ছেন, টাকা নিচ্ছেন।

ঢাকা শিশু হাসপাতালে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ আসে জ্বর, কাশি, সর্দি, ঠান্ডার সমস্যা নিয়ে আসে। ফলে এসব রোগে আক্রান্ত শিশুদের জন্য পৃথক হাসপাতাল বানানো সম্ভব হবে না। এই হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৫০ রোগী ভর্তি হয়। এর মধ্যে কমবেশি ১৫ শিশু নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিসসহ শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা নিয়ে আসছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, লক্ষণ দেখে করোনার রোগীকে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। রোগীরা অনেক ক্ষেত্রে তথ্য গোপন করছেন। এই হাসপাতাল থেকে করোনা সন্দেহে দুই শিশুকে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল, তবে তারা কেউ করোনাতে আক্রান্ত ছিল না।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ সফি আহমেদ বলেন, এই হাসপাতালে চার শয্যার পৃথক ইউনিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে করোনাভাইরাস অত্যন্ত ছোঁয়াচে হওয়ার অন্য রোগীর নিরাপত্তার স্বার্থে এখানে করোনা রোগীর চিকিৎসা করা হবে না।