বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষককে লাঞ্ছিত যুবলীগ নেতার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের হরিমোহন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আজমল হোসেনকে যুবলীগের এক নেতা লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঘটনার সময় বিদ্যালয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান আকতার, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মুসফিকুর রহমানসহ পাঁচজন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে একজন সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগে তদন্ত করতে আসা একটি দলও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। ওই তদন্ত প্রভাবিত করতেই চার-পাঁচজনের দলটি বিদ্যালয়ে এসে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকেছিল বলে অভিযোগ।

শিক্ষক আজমল হোসেনের ভাষ্য, তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কক্ষের সামনে চেয়ারে বসে ছিলেন। এ সময় জিলহাজ নামের এক যুবক এসে তাঁর নাম জানতে চান। তিনি কেন নাম বলবেন, এমন কথাবার্তায় জিলহাজ তাঁকে থাপ্পড় মারতে উদ্যত হন এবং বলেন, ‘থাপ্পড় মেরে তোর গাল ফাটিয়ে দেব। তুই স্কুল থেকে বের হয়ে আয়। তোকে আমি দেখে নেব।’ এ সময় তিনি মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তখন বিদ্যালয়ে জিলহাজের সঙ্গে জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মুসফিকুর রহমানসহ চার-পাঁচজন ছিলেন।

এ ঘটনায় আজমল হোসেন গতকাল বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক তরিকুল ইসলাম বলেন, কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (সামাজিক বিজ্ঞান) মাহবুবুল হকের বিরুদ্ধে গতকাল দুপুরে তদন্তে আসে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সাইফুল মালেকের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা শাজাহান আকতারের নেতৃত্বে চার-পাঁচজনের একটি দল তাঁর কক্ষে আসে। শাজাহান আকতার বলেন, শিক্ষকের (মাহবুবুল হক) বিরুদ্ধে অভিযোগকারী সেলিমুজ্জামান আসতে পারবেন না। তিনি তাঁর বাবাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী গেছেন। অভিযোগকারী অনুপস্থিত থাকলে কীভাবে তদন্ত হবে? এর কিছুক্ষণ পরেই বাইরে থেকে সহকারী শিক্ষক আজমল হোসেনের কান্নাজড়িত চিৎকার শুনে তিনি (প্রধান শিক্ষক) বাইরে বের হন। আজমল হোসেন কান্নায় ভেঙে পড়ে তাঁর লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, তাঁরা ওই ব্যক্তিকে নিয়ে এসে শিক্ষকের কাছে মাফ চাওয়ানোর ব্যবস্থা করবেন।

প্রধান শিক্ষক বলেন, তদন্ত প্রভাবিত করতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ ব্যাপারে সহকারী শিক্ষক মাহবুবুল হককে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নেতা শাজাহান আকতার বলেন, শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী হিসেবে উল্লেখিত সেলিমুজ্জামান তাঁর আত্মীয়। তিনি তাঁকে জানিয়েছেন, শিক্ষকের বিরুদ্ধে তিনি এ অভিযোগ করেননি। তাঁর নামে অন্য কেউ করেছেন। তা ছাড়া সেলিমুজ্জামান তাঁর অসুস্থ বাবাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী গেছেন। তিনি তদন্ত দলের সামনে উপস্থিত হতে পারবেন না, এ কথা প্রধান শিক্ষককে বলতে গিয়েছিলেন।

শাজাহান আকতার বলেন, ‘জিলহাজ যখন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আজমল হোসেনের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটান, তখন আমি দূরে ছিলাম। বিষয়টি তখন বুঝতে পারিনি। ঘটনাটি ঠিক হয়নি। জিলহাজ ভুল করেছেন। তিনি শিক্ষকের কাছে মাফ চেয়ে নেবেন।’

এ ব্যাপারে জিলহাজ দাবি করেন, তাঁকে বিদ্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেন আজমল হোসেন। তিনি তাঁকে (আজমল) বিদ্যালয়ের পিয়ন মনে করেছিলেন। এ জন্য তাঁর নাম জানতে চান এবং বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। তবে থাপ্পড় মারতে হাত ওঠানোর ঘটনা ঠিক না। তবে যা করেছেন, তা ভুল হয়েছে। তিনি শিক্ষকের কাছে মাফ চেয়ে নেবেন।

জিলহাজ নিজেকে পৌর যুব লীগের সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন। এ পরিচয় নিশ্চিত করেন শাজাহান আকতার।

ঘটনার সময় তদন্তকাজে হরিমোহন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে উপস্থিত ছিলেন বলে নিশ্চিত করেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল মালেক। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহবুবুল হকের বিরুদ্ধে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে এ তদন্ত হচ্ছে।