দেশে আরও ৩ জন করোনায় আক্রান্ত

ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

বাংলাদেশে নতুন করে আরও তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে মোট ১৭ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন।

আজ বৃহস্পতিবার সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। নতুন করে যে তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা ইতালিফেরত এক ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন বলে জানান আবুল কালাম আজাদ।

গতকাল বুধবার আইইডিসিআর জানায়, দেশে প্রথম কোনো ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মারা যাওয়া ব্যক্তি ৭০ বছর বয়সী একজন পুরুষ। তিনি ডায়াবেটিস, কিডনি, উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। এ ছাড়া তাঁর হার্টে স্টেন্ট পরানো ছিল।

আজ আবুল কালাম আজাদ বলেন, নতুন আক্রান্ত হওয়া তিনজন একই পরিবারের সদস্য। তাঁরা স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী। যিনি নারী তাঁর মধ্যে লক্ষণ মৃদু। তিনি কোয়ারেন্টিনে আছেন। পুরুষ দুজনের জ্বর আছে। তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তিনি জানান, এই তিনজনই ইতালিফেরত একজনের সংস্পর্শে এসেছিলেন।

দেশে কোভিড-১৯ সন্দেহে ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা করা হয়েছে ২৫টি। গত ২১ জানুয়ারি থেকে মোট ৩৬৬টি পরীক্ষা করা হয়। করোনাভাইরাসের সন্দেহে বিভিন্ন হাসপাতালে আইসোলেশনে আছেন ১৯ জন। বিদেশ থেকে আসা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ৪৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন। মোট আক্রান্ত ১৭ জন। দেশে ৮ মার্চ প্রথম তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। তাঁরা তিনজনই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

আবুল কালাম আজাদ জানান, সারা পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৯১ হাজার ১২৭টি নিশ্চিত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজার ১২৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সারা পৃথিবীতে এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৮৬০ জন মারা গেছেন। ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৭৮৬ জন। ইতালি, ইরান ও স্পেনে এখনো ছড়াচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি নেই। ইউরোপ এখন দুর্যোগপূর্ণ এলাকা। ইতালি ও স্পেন এখন নতুন কেন্দ্র। চীনের অবস্থা এখন অনেক ভালো।

যাঁরা বিদেশ থেকে বাংলাদেশ আসছেন, তাঁদের অবশ্যই ১৪ দিন নিজ বাসায় কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দিয়ে এই মহাপরিচালক বলেন, ঘরের বাইরে যাবেন না। নিয়ম মেনে চললে পরিবার ও আশাপাশের মানুষ নিরাপদে থাকবে। যাঁরা কোয়ারেন্টিন মেনে চলছেন না, তাঁদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যাওয়া হবে। জাতিকে রক্ষা করার জন্য প্রত্যেককে ভূমিকা পালন করতে হবে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সম্প্রতি লন্ডন থেকে ফিরে হোম কোয়ারেন্টিনে না থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে যোগ দেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সবার জন্যই সমান নির্দেশনা দেওয়া আছে।

চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাসরঞ্জাম ও কিট এবং করোনার লক্ষণ নিয়ে গেলে চিকিৎসা না পাওয়া বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘এটা জাতীয় দুর্যোগ। স্বাস্থ্যসেবায় আমরা নিয়োজিত মানুষের সেবা করার জন্য। তাঁদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমরা সরবরাহ করব। এ কথা বলতে পারব না যে আমরা তিন মাসের মজুত একসাথে দিতে পারব। কিন্তু সাপ্তাহিক এবং দৈনিক ভিত্তিতে তাঁদের নিরাপত্তাসরঞ্জাম সরবরাহ করব।’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় কর্মবিরতিতে গিয়েছিলেন তাঁরা। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, এ খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান। তিনি বলেন, তাঁদের লক্ষ্য হচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যে ১ লাখ কিট এবং ১০ লাখ ব্যক্তিগত নিরাপত্তাসরঞ্জাম সংগ্রহ করা। স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘জাতি ও বৃহত্তর মানবতার স্বার্থে সেবার কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখব না।’ এ ছাড়া তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে অনেক বড় কন্ট্রোল রুম করা হয়েছে। কোভিড-১৯কে গুরুত্ব দিচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো অবহেলা করা হচ্ছে না।

আজ দুই হাজার কিট এসেছে জানিয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, যখন প্রয়োজন হবে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও পরীক্ষার সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগেও করা হবে। তবে সব জায়গায় বিনা প্রস্তুতিতে এই পরীক্ষা সম্প্রসারণ করা যাবে না। কারণ, তাতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

করোনার সন্দেহে যত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, তার মধ্যে নিউমোনিয়ার নমুনা কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আজকে হঠাৎ করে এসেছি। আমি জানি না। আলমগীর (আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর) সাহেব বলতে পারবেন।’

কমিউনিটি ট্রান্সমিশন প্রসঙ্গে এই মহাপরিচালক বলেন, ‘এটা এখনো পরিবারের মধ্যে সীমিত আছে। এটাকে এখনো কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলতে পারব না।’ তিনি সবাইকে হাত ধোয়া, মাস্ক পরা ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলার পরামর্শ দেন।

কিট উদ্ভাবন নিয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যদি এটা সফল কিট হয়, কাজে লাগে, তাহলে অবশ্যই খুশি হব। বিষয়টা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর দেখছে। প্রশাসন এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি বানিয়েছে। গণমাধ্যমে জানতে পেরেছি যে এটা ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে রেজাল্ট দেয়। এটা র‌্যাপিড টেস্ট। অন্যান্য দেশেও এ রকম র‌্যাপিড টেস্ট উদ্ভাবিত হয়েছে। তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’ তিনি জানান, তাঁরাও চাইছেন, মানুষের উদ্বেগ দূর করতে এ ধরনের কোনো পরীক্ষা করার কথা। কিন্তু তিনি জানান, এখানে ফল নেগেটিভ হওয়ার হার খুব বেশি—১০ থেকে ১৫ শতাংশ। যদি কারও মধ্যে করোনভাইরাস থাকে এবং পরীক্ষায় বলা হয়—নেই, তাহলে এই ব্যক্তি অবাধে ঘোরাফেরা করবে। নিজে কোনো সতকর্তা নেবে না। তাই এই ধরনের কোনো ঝুঁকি নেওয়া যাবে না।

চীন থেকে চিকিৎসক আনার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, এই মুহূর্তে প্রয়োজন নেই। কিন্তু চীনের অভিজ্ঞতা নেওয়া হচ্ছে। তবে চীন থেকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তাসরঞ্জাম আনা হবে।