করোনা-আতঙ্ক : চট্টগ্রামে কোথাও ভিড় কোথাও ফাঁকা

চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউড়ি বাজার। বিকেল সাড়ে তিনটা। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও গতকাল শুক্রবার বিকেলে তেমন ভিড় নেই। সবজির দোকান থেকে কেনাকাটা করছিলেন দু-একজন ক্রেতা। মাছের দোকানগুলো ফাঁকা ছিল। 

তবে বাজার থেকে বেরিয়ে অন্য চিত্র চোখে পড়ে। বাজারের প্রবেশমুখে দাঁড়িয়েছিলেন চার–পাঁচজন ভিক্ষুক। পাশের টঙের চায়ের দোকানে ভিড় লেগে আছে। মুচির ছোট্ট দোকানটিতে নিজেদের জুতা সেলাই ও পরিষ্কারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিন ব্যক্তি। সামনের রাস্তায় লোকজনের আনাগোনাও কম না। টেম্পো, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশা চলছে সমানে। একদল কিশোরকে দল বেঁধে হেঁটে যেতে দেখা যায়। 

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বাংলাদেশের মানুষও। ইতিমধ্যে মারা গেছেন একজন। দেশজুড়ে চলছে করোনাভাইরাস নিয়ে আলোচনা। করোনার কারণে বন্দর নগরের চট্টগ্রামের জনজীবনেও কিছুটা প্রভাব পড়েছে। 

গতকাল নগরের রেলস্টেশন, বাসস্টেশন, কাঁচাবাজার, মসজিদ, উদ্যানসহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ভিন্ন ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। নগরের রাস্তাঘাটে গাড়ির পরিমাণ ছিল কম। গণপরিবহন চলাচল করলেও সেখানে যাত্রী ছিল কম। কাঁচাবাজারে সকালবেলায় ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশি থাকলেও বিকেলে ভিড় কমে যায়। অন্যান্য দিনের মতো গতকালও চেরাগি পাহাড় মোড়, সিআরবি এলাকায় জমজমাট আড্ডা ছিল। এসব এলাকায় বিভিন্ন বয়সী লোকজনকে আড্ডা দিতে দেখা যায়। তবে অধিকাংশ উদ্যান বন্ধ ছিল। 

রেলস্টেশনে অবশ্য মানুষের আনাগোনা কমেনি। গতকাল দুপুরের জুমার নামাজ পড়তে মুসল্লিরা মসজিদে উপস্থিত হয়েছিলেন। করোনাভাইরাসের কারণে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কৈবল্য ধামে শুক্রবারের নিয়মিত প্রসাদ বিতরণ বন্ধ রাখা হয়। তবে কীর্তন ও পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বন্ধের বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও প্রায় এক হাজার ভক্ত মন্দিরে এসেছিলেন বলে জানান মন্দির কমিটির পরিচালনা পর্ষদের প্রধান চন্দন দাশ। 

গতকাল বিকেলে কাজীর দেউড়ি বাজারের দোকানি মোহাম্মদ নাসিম ও মোহাম্মদ আজম প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কারণে মানুষের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক আছে। এ জন্য অনেকেই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বাজার করে নিয়ে গেছেন। তবে তরকারির দাম তেমন বাড়েনি বলে দাবি করেন তাঁরা। মানুষের বেশি কেনাকাটা নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করেছেন আবদুল জলিল নামের এক বিক্রেতা। তিনি বলেন, সামর্থ্যবান লোকেরা যদি একেবারে সব কিনে নিয়ে যান তাহলে নিম্নবিত্তদের কী হবে? তাঁদের একসঙ্গে সব কেনার সামর্থ্য নেই। 

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলগামী বাসের বড় কাউন্টার রয়েছে নগরের দামপাড়া গরিবউল্লাহ শাহ মাজার এলাকায়। প্রতিদিন বিকেলে এখানে প্রচুর ভিড় থাকে। তবে গতকাল বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বাস কোম্পানির কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের উপস্থিতি খুবই কম। একেকটি কাউন্টারে চার-পাঁচজন করে যাত্রী গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। 

ইউনিক পরিবহনের কাউন্টারে অপেক্ষা করছিলেন বখতেয়ার আহমেদ। ঢাকার এই বাসিন্দা পারিবারিক প্রয়োজনে গতকাল সকালে চট্টগ্রাম এসেছিলেন। কাজ শেষ করে বিকেলেই ঢাকা যাবেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি কাজের কারণের চট্টগ্রামে আসতে হয়েছে। মানুষকে করোনা নিয়ে বেশি আতঙ্কিত মনে হচ্ছে তাঁর।

পাশের শ্যামলী পরিবহন কাউন্টারের মো. সেকান্দর নামের এক কর্মী অবশ্য অন্য কথা বলেছেন। তাঁর মতে, চট্টগ্রাম বার আউলিয়ার দেশ। এখানে তেমন কিছু হবে না। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। দুপুরে মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে সেখানেও হুজুরও একই কথা বলেছেন বলে জানান তিনি। তবে করোনার কারণে তিনি মাস্ক ব্যবহার শুরু করেছেন। 

শ্যামলী ও ইউনিক পরিবহনের কাউন্টারে থাকা দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানান, করোনা–আতঙ্কে গতকাল যাত্রীর সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। সামনের দিন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন দুই পরিবহনের কর্মকর্তারা। ইউনিক পরিবহনের ঢাকাগামী গাড়ি ১৫ মিনিট পরপর গাড়ি ছাড়ত। এখন ছাড়ছে আধা ঘণ্টা পরপর। 

গতকাল দুপুরে জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে মসজিদে মুসল্লির ভিড় ছিল অনেক। নগরের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, দুই নম্বর গেটের পূর্ব নাসিরাবাদের তিনতলা মসজিদ, প্রবর্তক মোড়ের বদনা শাহ মসজিদ, মেহেদীবাগের মসজিদ, লাভলেন মসজিদে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা এসব মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন। গতকালও একই চিত্র দেখা যায়। অনেককে পরিবারের সদস্যদের ও বন্ধুদের একসঙ্গে এসেছিলেন। বয়স্ক ব্যক্তিদের অনেকের মুখে মাস্ক ছিল না। অথচ করোনাতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন বৃদ্ধ ব্যক্তিরা। শিশু-কিশোরদের মুখেও মাস্ক দেখা যায়নি। 

বদনা শাহ মসজিদ ও মেহেদীবাগ মসজিদে নামাজ পড়ে বের হওয়া দুজন মুসল্লি জানান, জুমার নামাজে যে পরিমাণ ভিড় থাকে গতকাল কিছুটা কম ছিল। করোনার কারণে এই অবস্থা হয়।