পেঁয়াজ তোলার হিড়িক, কেজিতে দাম কমল ১৫ টাকা

পেঁয়াজের ভান্ডার বলে পরিচিত পাবনার সাঁথিয়ায় এক দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের পাইকারি দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে। গতকাল শুক্রবার উপজেলার হাটগুলোতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারি ৪৫ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু আজ শনিবারই এই দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকায় নেমে এসেছে। উপজেলার পেঁয়াজচাষিরা হঠাৎ করেই জমি থেকে পেঁয়াজ তোলা বাড়িয়ে দেওয়ায় সরবরাহ বেড়ে গেছে। আর তাতেই দাম কমেছে।

উপজেলার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাস তিনেক আগেও সাধারণ মানুষের প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল পেঁয়াজ। তখন প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ওঠেছিল ২৫০ টাকার বেশি। অথচ ১৬ মার্চ সাঁথিয়ার বাজারে পাইকারিতে তা বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ টাকায়। এই দামে পেঁয়াজচাষিরা লোকসানে পড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পেঁয়াজচাষিদের শাপে বর হয়ে দাঁড়ায়।

করোনাভাইরাসের কারণে পেঁয়াজের সংকট দেখা দিতে পারে বলে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে উপজেলার পেঁয়াজের হাটগুলো থেকে ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ কেনার হিড়িক পড়ে। এতে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বাড়তে থাকে। ১৬ মার্চ থেকে গতকাল শুক্রবার (২০ মার্চ) পর্যন্ত টানা দাম বাড়তে থাকে। গতকাল দাম বেড়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের পাইকারি দর ৪৫ থেকে ৫২ টাকায় দাঁড়ায়। এই দামে পেঁয়াজচাষিদের মধ্যে স্বস্তি দেখা দেয়। কৃষকেরা তাই ভালো লাভের আশায় ও ভবিষ্যতে দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কায় জমি থেকে দ্রুত পেঁয়াজ তুলতে থাকেন। ফলে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ব্যাপক বেড়ে যায়। এ কারণে আজ প্রতি কেজিতে পেঁয়াজের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে যায় বলে জানান ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী জানান, এবার এই উপজেলায় ১৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম মূলকাটা বা মুড়িকাটা (কন্দ থেকে বীজ) পদ্ধতির পেঁয়াজ আবাদ করা হয়েছিল। মাস দেড়েক আগে সেই পেঁয়াজ শেষ হয়ে গেছে। কৃষকেরা এখন হালি বা মূল পদ্ধতিতে (বীজ থেকে বীজ) আবাদ করা পেঁয়াজ ঘরে তুলছেন। উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৫০০ হেক্টরের বেশি জমির হালি পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে উঠেছে। আগামী মাস দেড়েকের মধ্যে বাকি পেঁয়াজও উঠে যাবে।

কয়েকজন পেঁয়াজচাষি বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজ চাষ করে তাঁরা লোকসান দিয়ে আসছেন। কিন্তু এবার দাম বেশি দেখে তাঁরা বেশি জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছিলেন। তবে এবার বেশি দামে পেঁয়াজের বীজ ও চারা কিনতে হয়েছে বলে আবাদের খরচ হয়েছে অন্যবারের তুলনায় বেশি। এই অবস্থায় প্রতি কেজি পেঁয়াজের উৎপাদনে ২৫ থেকে ২৭ টাকা পড়েছে বলে জানান কৃষকেরা। ১৬ মার্চ থেকে দাম পড়ে যাওয়ায় চাষিরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছিলেন। তবে এরপর আবার দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের লাভ হচ্ছিল বলে তাঁরা জানান।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জমি থেকে পেঁয়াজ তোলার ধুম পড়ে গেছে। তোলার পর সেই পেঁয়াজ বাড়িতে নিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে। এ জন্য অনেক বাড়িতেই নারী-পুরুষদের এ কাজে চরম ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। বায়া গ্রামের কৃষক হাফেজ ব্যাপারী বলেন, ‘পরপর কয়েক বছর পেঁয়াজে লোকসান দিছি। ছয় দিন আগে পেঁয়াজের দাম ২০ টাকায় নামা দেইখ্যা মন ভাইঙ্যা গেছিল। করোনাভাইরাসের জন্য দাম আবার বাড়িছে। এই দামে পেঁয়াজ বেচলি ভালোই লাভ হবি। তাই যত তাড়াতাড়ি পারা যায়, জমিরথ্যা পেঁয়াজ তুলত্যাছি।’

উপজেলার করমজা হাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পেঁয়াজের প্রচুর আমদানি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক ব্যবসায়ী পেঁয়াজ কিনতে এসেছেন। আজ এই হাট থেকে প্রায় ৫০ ট্রাক (প্রতি ট্রাকে ১৩ টন) পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন স্থানে গেছে।

করমজা হাটের আড়তদার মুন্নাফ প্রামাণিক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম একেবারে কমে গিয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ায় দাম আবারও বেড়ে যায়। কৃষকেরা এই সুযোগে জমি থেকে বেশি বেশি পেঁয়াজ তুলছেন। তাই আজ হাটে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক আমদানি দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া গত দু-তিন দিনেও ব্যবসায়ীরা প্রচুর পেঁয়াজ কিনে রেখেছেন। ফলে দাম আজকে কিছুটা কমেছে।’