করোনায় বদলে যাওয়া ঢাকা

পুরান ঢাকার ধোলাইখালের ফুটপাত ঢেকে থাকে লোহালক্কড়ে। পুরোনো গাড়ির যন্ত্রাংশ দোকানের সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। এটাই ধোলাইখালের চিরচেনা চিত্র। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বদলে গেছে সবকিছু। আজ বুধবার দুপুর ১২টায় ধোলাইখালে দেখা গেল, সারি সারি সব দোকানপাট বন্ধ। মার্কেটে মার্কেটে তালা ঝুলছে। সড়কে গণপরিবহন নেই। মাঝেমধ্যে দু-একটা রিকশা-অটোরিকশা চলাচল করছে।

করোনায় বন্ধ পান্থপথের বসুন্ধরা শপিংমল। ছবি: আসাদুজ্জামান
করোনায় বন্ধ পান্থপথের বসুন্ধরা শপিংমল। ছবি: আসাদুজ্জামান

ধোলাইখালের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ স্বপন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের নির্দেশে ধোলাইখালের সব দোকান বন্ধ রয়েছে। করোনাভাইরাসের জন্য আমরা আগে থেকে দোকান বন্ধ রাখার প্রস্তুতি নিয়েছি। সবাই যাতে আমরা ভালো থাকতে পারি, সে জন্য এই অবস্থা। আমরা জানি, দোকান বন্ধ রাখার কারণে আমাদের চলতে বড় কষ্ট হবে।’

সদরঘাট এখন ফাঁকা। ছবি: আসাদুজ্জামান
সদরঘাট এখন ফাঁকা। ছবি: আসাদুজ্জামান

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা যাত্রাবাড়ী মোড়। বেলা ১১টার সময় দেখা গেল, মাওয়াগামী কয়েকটি বাস দাঁড়িয়ে। বাসের সামনে কয়েকজন মানুষ। তাঁরা হ্যান্ডগ্লাভস কেনায় ব্যস্ত।
রফিক নামের একজন প্রথম আলোকে বলেন, সাত দিন ধরে তিনি মাস্ক-গ্লাভস বিক্রি করছেন। মানুষের মুখে এখন করোনা ছাড়া আর কিছু নেই। করোনার ভয়ে অধিকাংশ মানুষ মাস্ক কিনছেন, হাতে পরছেন গ্লাভস। রফিক জানান, প্রতিটি মাস্ক তিনি ৩০ টাকায় বিক্রি করছেন। আর এক জোড়া গ্লাভস বিক্রি করছেন ২০ টাকা করে।

পুরান ঢাকার বাংলাবাজার মোড়ে দেখা মিলবে বইয়ের দোকান। ফুটপাতে কিংবা মার্কেটে কেবলই বইয়ের দোকান। আজ বুধবার দুপুরে দেখা গেল উল্টো চিত্র। বন্ধ সব বইয়ের দোকান।
আবদুস সালাম নামের একজন রিকশাওয়ালা বলেন, ‘দেশে কী এক ভাইরাস এসেছে, নাম তার করোনাভাইরাস। এই করোনাভাইরাসে সব বদলে গেছে। সব দোকান বন্ধ। রাস্তা-ঘাটে মানুষ নেই।’
এই চিত্র কেবল ধোলাইখাল, যাত্রাবাড়ী কিংবা বাংলাবাজারের নয়। পুরো ঢাকা শহর বদলে গেছে। বন্ধ রয়েছে ঢাকা শহরের সব বড় মার্কেট। বন্ধ দোকানপাট।

গুলিস্তানের পীর ইয়ামেনি মার্কেট বন্ধ। ছবি: আসাদুজ্জামান
গুলিস্তানের পীর ইয়ামেনি মার্কেট বন্ধ। ছবি: আসাদুজ্জামান

ছুটির দিন ছাড়া অন্য সব দিনে পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলী কিংবা ইসলামপুরে মানুষের উপচেপড়া ভিড় থাকে। ব্যবসায়ী-ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর থাকে সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। বুধবার বেলা ২টার দিকে দেখা গেল, দোকানপাট সব বন্ধ। লোকজন মাস্ক আর হ্যান্ডগ্লাভস কেনায় ব্যস্ত। একই চিত্র সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও। কোনো লঞ্চ ছাড়েনি আজ।

ঢাকায় রমরমা মাস্ক আর গ্লাভসের ব্যবসা। ছবি: আসাদুজ্জামান
ঢাকায় রমরমা মাস্ক আর গ্লাভসের ব্যবসা। ছবি: আসাদুজ্জামান

পুরান ঢাকার বাবুবাজারে মিটফোর্ড ওষুধ মার্কেটের সামনে অন্তত ১০ জন মাস্ক আর হ্যান্ডগ্লাভস বিক্রি করছিলেন। এদের একজন মোহাম্মদ কাউসার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজারে বাকরখানি বানাতেন। করোনাভাইরাস আসার কারণে তাঁর দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। তাই এক সপ্তাহ ধরে তিনি মাস্ক আর হ্যান্ডগ্লাভস বিক্রি করছেন। করোনাভাইরাসে মানুষ বড়ই আতঙ্কিত।

রাজধানীর মতিঝিল, গুলিস্তান, দোয়েল চত্বর, শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজারসহ একাধিক স্থানে ঘুরে দেখা গেল, সড়ক এখন ফাঁকা। রাস্তায় বাস তেমন নেই। অনেক সময় পর পর হঠাৎ দু-একটা বাসের দেখা মেলে।

করোনায় ধোলাইখালের সব দোকানপাট বন্ধ। ছবি: আসাদুজ্জামান
করোনায় ধোলাইখালের সব দোকানপাট বন্ধ। ছবি: আসাদুজ্জামান

পান্থপথ মোড়ে নিজাম উদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সব মার্কেট বন্ধ। ঢাকার রাস্তা এখন ফাঁকা। কত দিন এভাবে চলবে, কে জানে?
জাহাঙ্গীর আলম নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের জীবন বদলে গেছে। বদলে গেছে রাজধানী ঢাকা। ঢাকা এখন অচল এক শহর। মানুষ বড় আতঙ্কে আছে।’