'স্বামী হাসপাতালে, সন্তান নিয়ে আমি ঘরে বন্দী'

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিরবাজার এলাকার বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় ঘোষ ১৫ বছর ধরে তাঁর স্ত্রী শম্পা রানীকে নিয়ে ইতালির রোমে থাকেন। সেখানে এক মহল্লায় মুদির দোকান চালান। ৫ মার্চ দোকানেই তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাঁকে রোমের একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসার পর তিনি এখন সুস্থ। কিন্তু ইতালিতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাননি। তিনি হাসপাতালে আর লকডাউনে ঘরে বন্দী তাঁর স্ত্রী-সন্তান।

শম্পা মেসেঞ্জারে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামী যখন অসুস্থ, তখন ইতালিতে করোনাভাইরাসের প্রভাব দেখা দিয়েছে। আমরা হাসপাতালে ভর্তি করার পর ঠিকভাবেই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। করোনার কারণে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়েনি। আমরা অনলাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতে পারছি। স্বামী হাসপাতালে আর সন্তান নিয়ে আমি ঘরে বন্দী। উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।’

শরীয়তপুর সদর উপজেলার গঙ্গানগর গ্রামের সঞ্জয় কুমার ১২ বছর ধরে ইতালির রোমে থাকেন। বছর তিনেক আগে বাংলাদেশে এসে নড়িয়ার মেয়ে পান্না রানীকে বিয়ে করেন। এর ছয় মাস পর স্ত্রীকে ইতালিতে নিয়ে যান। পান্না এখন অন্তঃসত্ত্বা। গতকাল বুধবার রাতে মুঠোফোনে সঞ্জয় বললেন, ‘মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আমাদের সন্তান জন্ম নেবে। সন্তান পৃথিবীর আলো দেখবে—একদিকে এই আনন্দ, আবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বন্দী অবস্থায় মৃত্যুপুরীতে আছি, সেই দুশ্চিন্তা। আমার স্ত্রী সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকেন।’

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গোয়ালা গ্রামের অজিত কুমার ইতালির রোমে থাকেন। ১০ মার্চ তিনি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরীক্ষায় তাঁর শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। চিকিৎসার পর চার দিনে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু ইতালিতে লকডাউন চলায় তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়নি। তাঁকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন আছেন। অজিতের মালয়েশিয়াপ্রবাসী ভাই অসিত কুমার ম্যাসেঞ্জারে গতকাল রাতে বলেন, ভাইয়ের পাশে থেকে সেবাযত্ন করার কেউ নেই। পরিবারের সবাই উদ্বিগ্ন। কিন্তু কারও কিছু করার নেই।

রোমের এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী গতকাল মেসেঞ্জারে বলেন, ‘আমরা ঘরবন্দী আছি দুই সপ্তাহ হয়ে গেছে। আর কত দিন এই অবস্থা থাকবে, জানি না। যেকোনো সংকটে পরিচিতজন-স্বজন পাশে থাকলে কষ্ট কম হয়, কিন্তু এই সংকটটা অন্য রকম। সবাইকে সামাজিক মেলামেশা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। শুধু ফোনে-অনলাইনে যোগাযোগ করছি। যাঁরা একা থাকেন, তাঁদের মনের অবস্থা অনেক খারাপ। চাইলেই কেউ কাউকে সাহায্য করতে পারছি না।’