কারখানা বন্ধ, মাস্ক বানিয়ে বিক্রি করছেন দম্পতি

সরকারের নির্দেশে কারখানা বন্ধ। এই সময়ে মাস্ক বানিয়ে বিক্রি করছেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের রফিক মিয়া ও নাছরিন বেগম দম্পতি। ছবি: প্রথম আলো
সরকারের নির্দেশে কারখানা বন্ধ। এই সময়ে মাস্ক বানিয়ে বিক্রি করছেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের রফিক মিয়া ও নাছরিন বেগম দম্পতি। ছবি: প্রথম আলো

'বাচ্চাগো গেঞ্জি আর মেয়েগো পালাজু বানানের কাজ করতাম। সরকারের নির্দেশে হাট-বাজার বন্ধ করে দেওয়া হইছে। ম্যায়ারা সব চইল্যা গেছে। আমার কাছে কিছু কাপড় আছিল। তাই দিয়্যা মাস্ক বানাইতাছি। বাজারে মাস্কের যে দাম! আমি গ্রামের লোকজনরে খুব কম খরচে দিচ্ছি। কেউ পাইকারি নিলে তাঁরেও দিচ্ছি। কারখানা বন্ধ রাইখা স্বামী-স্ত্রী মিলা যে কাজ করতাছি, তাতে আমার লাভ অইতাছে, এলাকার লোকজনও সুবিধা পাইতাছে।'

কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া ইউনিয়নের আগছাওয়ালী গ্রামের মো. রফিক মিয়া। গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় উৎপাদন ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। বছর দেড়েক আগে অবসরে যান। এরপর ১২টি মেশিন কিনে নিজের বাড়িতেই পোশাক কারখানা গড়ে তুলেন। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকারি নির্দেশনায় তিনি তাঁর কারখানা বন্ধ রেখেছেন। এই অবসরে তিনি ও তাঁর স্ত্রী নাছরিন বেগম মাস্ক বানাচ্ছেন।

গতকাল বুধবার বিকেলে রফিক–নাছরিন দম্পতির বাড়িতে দেখা যায়, একটা একচালা টিনের ঘর। পাশে পাকা একতলা ভবন। টিনের ঘরটিতে নতুন কাপড় রাখা হয়েছে। আর পাকা ভবনের একটি কক্ষে ১২টি সেলাই মেশিন দিয়ে সাজানো ছোট কারখানা। এখানকার দুটি মেশিনে স্বামী-স্ত্রী মিলে কাজ করছেন।

রফিক মিয়া বললেন, অভাবের কারণে পঞ্চম শ্রেণির বেশি পড়তে পারেননি তিনি। ১৯৯০ সালে ঢাকার ওয়ারীতে একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ নেন। সেখানকার অভিজ্ঞতা নিয়ে গাজীপুরের একটি কারখানায় প্রথমে সহকারি উৎপাদন ব্যবস্থাপক এবং পরে উৎপাদন ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেন। দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। মেঝ মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে আর ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

অবসরের পর বসে না থেকে বাড়িতে কারখানা গড়ে তুলেন। গ্রামের দরিদ্র ও বেকার নারীদের নিয়ে কারখানায় প্রতি সপ্তাহে ২০০টি করে বাচ্চাদের গেঞ্জি ও মেয়েদের পালাজু বানান। সেগুলো টাঙ্গাইলের করটিয়াতে বিক্রি করেন। নরসিংদীর মাধবদী ও গাজীপুরের কোনাবাড়ি থেকে থান কাপড় কেনেন। এভাবে ভালোই চলছিল তাঁর। কিন্তু হঠাৎ করোনা–আতঙ্কে সরকারি নির্দেশ মেনে কারখানা বন্ধ করে দেন তিনি। জানতে পারেন, বাজারে মাস্কের সঙ্কট ও চড়া দামে মাস্ক বিক্রি হচ্ছে। এ জন্য তাঁর সংগ্রহে থাকা কাপড় দিয়ে এক সপ্তাহ আগে মাস্ক বানানো শুরু করেন। তাঁর কাজে সহায়তা করছেন স্ত্রী। তাঁরা দুজন গড়ে প্রতিদিন ১০০টি মাস্ক বানাচ্ছেন। স্থানীয় বাজারে পাইকারি ৭ টাকা ও খুচরা ১০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

মাস্ক কিনতে আসা কড়াইল গ্রামের দুলাল হোসেন বলেন, 'বাইরে ২৫-৩০ টাকায় মাস্ক কিনতে হয়। এইখানে ১০ টাকায় কিনতে পারতাছি। ভালোই।'
রফিক মিয়ার স্ত্রী নাছরিন বেগম বলেন, 'গার্মেন্টেসে কতদিন কাম করছিলাম। তারপর বাদ দিছিলাম। হেই (স্বামী) মেশিন আনাতে অহন তাঁর লগে কাজ করি। আমার ভালো লাগে।'

রফিক মিয়া বলেন, 'মাস্ক বানানো আমাদের পেশা না। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বামী-স্ত্রী দুজনে প্রতিদিন ১০০ পিস কইর‌্যা বানাই। গ্রামের লোকজন আর দোকানদার আইসা নিয়া যান। আমি মাস্ক বানিয়া এলাকার চাহিদা মিটাইতে পারতাছি এইড্যা আমার কাছে গৌরবের মনে হইতেছে।'