রাজবাড়ীতে দগ্ধ স্যানিটারি পরিদর্শকের মৃত্যু

রাজবাড়ী
রাজবাড়ী

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় অগ্নিদগ্ধ উপজেলা স্যানেটারি পরিদর্শক মুহাম্মদ সাইফুর রহমান (৪০) আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসিফ মাহমুদ এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মুহাম্মদ সাইফুর রহমান গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি পরিত্যক্ত আবাসিক ভবনের কক্ষে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ হন। মশার কয়েল থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাইফুর রহমান প্রায় পাঁচ বছর ধরে গোয়ালন্দ উপজেলা স্যানেটারি পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁর বাড়ি ফরিদপুরের মুধুখালী উপজেলার।

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৈশ প্রহরী মো. তারিকুল ইসলাম জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতর পশ্চিম পাশে একটি পরিত্যক্ত দ্বিতল ভবন রয়েছে। ভবনের নিচতলার একপাশে অ্যাম্বুলেন্স রাখার গ্যারেজ। পাশের কক্ষে তিনি (নৈশ প্রহরী) পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে লিটন নামের আরেক কর্মচারী এবং পাশের কক্ষে উপজেলা স্যানেটারি পরিদর্শক সাইফুর রহমান একাই থাকতেন।

তারিকুল ইসলাম জানান, গতকাল বেলা তিনটার দিকে তিনি বাসায় দুুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। এ সময় তাঁর স্ত্রী মানুষের গোঙরানের শব্দ পান। পরে তিনি ঘর থেকে বের হয়ে দ্বিতীয় তলা থেকে গোঙরানোর শব্দ আসছে বলে নিশ্চিত হন। দ্রুত গিয়ে দেখেন সাইফুর রহমানের কক্ষ থেকে ধোয়া বের হচ্ছে ও চিৎকার-গোঙরানোর শব্দ আসছে। তাৎক্ষনিকভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ সবাইকে ডাকেন। পরে শাবল ও কুড়াল দিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দেখেন, দরজার সামনে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পড়ে আছেন সাইফুর রহমান। দ্রুত পানি ঢালার পর তাঁকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় ঘরের দরজা-জানালা সবকিছু বন্ধ ছিল। তাঁর বিছানার কম্বলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র পুড়ে গেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসিফ মাহমুদ জানান, 'সাইফুর রহমানের শরীরের বেশিরভাগ অংশ আগুনে ঝলসে যায়। তাঁকে মূমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে আমি নিজেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে আটটার দিকে তিনি মারা যান বলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানান।'

আসিফ মাহমুদ আরও জানান, সাইফুর রহমানকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধারের সময় ঘরে মশার কয়েলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি দুপরে মশার কয়েল ধরিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। আগুনের উত্তাপে তাঁর ঘুম ভাঙ্গে। কিন্তু কক্ষটি ধোঁয়ায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ায় তিনি দরজা খুলে বের হতে পারেননি। সাইফুর রহমানের স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান রয়েছে। তাঁরা সবাই গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলা শহরে থাকেন। সাইফুর একাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওই কক্ষে বসবাস করতেন। ময়নাতদন্ত শেষে তাঁর স্বজনেরা লাশ গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।