রাজবাড়ীতে পুলিশ বানাচ্ছে ৫০ হাজার স্যানিটাইজার

স্যানিটাইজার
স্যানিটাইজার

রাজবাড়ীতে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ৫০ হাজার জীবাণুনাশক দ্রবণ বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করছেন পুলিশ সদস্যরা। এসব স্যানিটাইজার বিতরণ করা হচ্ছে এলাকাবাসীর মধ্যে।

এ ছাড়া জেলা পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে স্যানিটাইজার তৈরি করা ছাড়াও ভাইরাসের বিস্তার রোধে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের বাড়িতে স্টিকার লাগানো, যৌনপল্লি বন্ধ, হাত ধোয়ার জন্য হ্যান্ডওয়াশ কর্নার স্থাপন ও মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। প্রবীণ বাসিন্দা ও দুস্থ মানুষদের সহায়তায়ও বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে সর্বস্তরে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন পুলিশের সদস্যরা। পুলিশের কাজে সহযোগিতা করছে স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।

রাজবাড়ী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'রেলগেট থেকে বাজারের দিকে দুইপাশের অন্তত ১০-১২টি ফার্মেসি ঘুরেও হেক্সিসল ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাইনি। সব বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে! এ সময় পুলিশের তৈরি হ্যান্ড স্যানিটাইজার পেলাম একটি সংগঠনের মাধ্যমে। আশা করছি, আগামী সময়েও পুলিশ এমন ইতিবাচক কর্মকান্ড অব্যাহত রাখবে।'

রিক্সা শ্রমিক রমজান আলী শেখ বলেন, 'আমরা দিন আনি দিন খাই। বিভিন্ন দুর্যোগে চেয়ারম্যান, এমপিদের কাছ থেকে সহায়তা পাই। কিন্তু এবার নেতাদের মাঠে দেখা যাচ্ছে না। তবে পুলিশের কাছ থেকে বোতল পেয়েছি হাত মোছার জন্য।'

সাংস্কৃতিক কর্মী কবি নেহাল আহমেদ বলেন, 'পুলিশের কাজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো হাত ধোয়ার জন্য সাবান ও বেসিনের ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিজেরা তৈরি করে বিতরণ করা। আমরা পুলিশের এই চেহারা সবসময় দেখতে চাই। মানবতার জন্য পুলিশ। পুলিশ জনগনের বন্ধু, এটি যেন সাধারণ মানুষ সবসময় বুঝতে পারেন। সাংস্কৃতিক কর্মী বা স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করার জন্য সাধুবাদ জানাই। আর বিশেষ ধন্যবাদ জানাই পুলিশ সুপারকে।'

পুলিশ সুপারের কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীতে পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে এক হাজার ৬৫৭ জন বিদেশ ফেরত ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের পর ফটকে হোম কোয়াারেন্টিন স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হয়। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহের পর পুলিশ লাইন ড্রিল শেডে তা তৈরি করা হচ্ছে। বোতলজাত করার পর বিভিন্ন থানা ও সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে এসব বিতরণ করা হচ্ছে। গতকাল শনিবার থেকে তৈরি করা হচ্ছে মাস্ক। প্রথম দিনে চারহাজার মাস্ক তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এসব সার্বিক পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানে আছেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, 'মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরেছিলাম। এ কারণে কর্তৃপক্ষের আশায় না থেকে আমরা আগ বাড়িয়ে কাজ শুরু করে দিই। প্রথমে ২০ মার্চ বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের বাড়িতে স্টিকার লাগানো শুরু করি। এরপর সরকারের উচ্চ মহলে যোগাযোগ করি। যৌনপল্লির জন্য খাদ্যের আশ্বাস পেয়ে তা বন্ধ করে দেই। এরপর মনে হলো সঙ্গ নিরোধ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বেশি প্রয়োজন। তাই বিভিন্ন স্থানে ৯৭টি হাত ধোয়ার স্থানের ব্যবস্থা করলাম।'

পুলিশ সুপার আরও বলেন, 'এরপর দেখি বাজারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার নেই। টাকা দিয়েও অনেকে কিনতে পারছিলেন না। তখন হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির কথা মাথায় আসে। আমার টার্গেট ছিলো এলাকার মানুষকে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে সচেতন করতে পারলেই বিপদ বা ক্ষতি অনেক কমাতে পারব। এ কারণে নির্ধারিত দায়িত্বের বাইরে গিয়ে এই কাজগুলো করছি। এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও ব্যবহার করছি।'