চলনবিলে অর্ধেক দামে হাঁসের ডিম বিক্রি, বিপাকে খামারিরা

নাটোরের সিংড়া হাটে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হাঁসের ডিম। গত বৃহস্পতিবার তোলা। ছবি: প্রথম আলো
নাটোরের সিংড়া হাটে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হাঁসের ডিম। গত বৃহস্পতিবার তোলা। ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় নাটোরের সিংড়ার চলনবিল এলাকায় হাঁসের ডিমের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। ৪০ টাকা হালি ডিম গত বৃহস্পতিবার সকালে ২০ টাকা হালিতে বিক্রি হয়েছে। এতে ডিম উৎপাদন করে লোকসান হওয়ায় খামারিরা বিপাকে পড়েছেন। তবে কম দামে ডিম কিনতে পেরে ক্রেতারা খুশি।

জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কার্যালয় ও হাঁসের খামারিদের সূত্রে জানা যায়, সিংড়ার চলনবিল এলাকায় উন্মুক্ত জলাশয়ে হাঁসের শতাধিক খামার রয়েছে। এসব খামার থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার হাঁসের ডিম উৎপাদিত হয়। গত বুধবার পর্যন্ত এসব ডিম ৪০ টাকা হালি (চারটি) বিক্রি হয়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারেরা এসে এখান থেকে ডিম কিনে নিয়ে যান। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় বাইরের পাইকারেরা বৃহস্পতিবার ডিম কিনতে আসতে পারেননি। ফলে সরবরাহের চেয়ে চাহিদা কমে আসে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বাড়িতে খাওয়ার জন্য কিছু বিক্রি হলেও অধিকাংশ ডিম অবিক্রীত থেকে যায়। এ কারণে খামারিরা প্রতি হালি ডিম ২০ টাকা করে বিক্রি করেছেন।

হাঁসের খামারি লিয়াকত আলী জানান, গত বৃহস্পতিবার ছিল সিংড়ার সাপ্তাহিক হাটবার। চলনবিলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শতাধিক খামারি ডিম বিক্রি করতে হাটে আসেন। কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পাইকারেরা বাইরে থেকে আসতে পারেননি। তাই ২০ টাকা হালি দরে ডিম বিক্রি করতে তিনি বাধ্য হয়েছেন। অথচ গত সোমবারের হাটেও তিনি প্রতি হালি হাঁসের ডিম বিক্রি করেছেন ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে। তিনি আরও জানান, প্রতি হালি ডিম উৎপাদন করতে তাঁর খরচ হয়েছে ২৬ টাকা। খরচের টাকা না ওঠায় তিনি এখন হাঁস পালন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

সিংড়া শহরের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, ডিমের দাম অর্ধেকে নেমে আসায় তিনি বাড়িতে খাওয়ার জন্য ১৬০টি ডিম কিনেছেন। ডিম কিনতে তাঁর ৮০০ টাকা কম লেগেছে।

এ বিষয়ে সিংড়া হাটের ডিমের আড়তদার আবদুল ওহাব বলেন, গণপরিবহন না থাকায় ডিম অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে। হাটে পাইকার ছিল না। স্থানীয় লোকজন খাওয়ার জন্য শুধু ডিম কিনেছেন। আগামী হাটে ডিমের দাম আরও কমে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন। কারণ, গণপরিবহন না চললে ডিম উৎপাদন ব্যাহত হবে না। বরং গরমে ডিম নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই মূল্য যা–ই হোক, খামারিদের ডিম বিক্রি করতেই হবে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নাটোর কার্যালয়ের উপপরিচালক সামশুল আলম বলেন, ডিম উৎপাদনের তুলনায় ক্রেতা অনেক কম হওয়ায় খামারিরা ন্যায্যমূল্য পাননি। বিষয়টি মানবিক। তবে কোনো খামারিকে কম দামে ডিম বিক্রি করতে বাধ্য করা যাবে না। এ ধরনের চেষ্টা করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।