তহবিল সংগ্রহে সহায়তা দেবে জাতিসংঘ

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস সংক্রমণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং তা প্রতিরোধের জন্য বাংলাদেশের প্রায় ৩০ কোটি ডলারের প্রয়োজন হবে। জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের যৌথভাবে প্রণীত জাতীয় প্রস্তুতি ও সাড়াদান পরিকল্পনার খসড়ায় এ চাহিদার উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে প্রণীত ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তহবিল সংগ্রহে জাতিসংঘ সহযোগিতা করবে। ঢাকায় জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

ঢাকায় জাতিসংঘ তথ্যকেন্দ্র গত শনিবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশে জাতীয় প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদান পরিকল্পনা নথি প্রণয়নের কথা জানিয়েছিল। জাতীয় প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদান পরিকল্পনা (কান্ট্রি প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্ল্যান) হলো একটি পরিকল্পনার নথি, যা যৌথভাবে জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বেশ কিছু নাগরিক সমাজের অংশীদার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় তৈরি করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক নির্দেশনার সঙ্গে সংগতি রেখে তৈরি করা ওই নথির উদ্দেশ্য হলো বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে সরকারের সাড়া প্রদানে সহায়তা করতে জাতিসংঘের সংস্থা ও অংশীদারদের কার্যকরভাবে প্রস্তুত করা।

জাতিসংঘের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অতি দ্রুত কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাস অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

বাংলাদেশের জাতীয় প্রস্তুতি ও সাড়াদান পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য কর্মকর্তা ক্যাটালিন বেরকারু আজ সোমবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোভিড-১৯-এর ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশকে সহায়তার জন্য ওই পরিকল্পনার নথিটি করা হয়েছে। আর তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বাংলাদেশকে প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা করবে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তহবিলে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হবে।’

কবে ও কখন ওই তহবিল সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হবে, এ বিষয়ে কিছু জানাতে অপারগতা জানান ঢাকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই কর্মকর্তা। তিনি জানান, পরিকল্পনার নথিটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। খসড়া পর্যায়ে আছে। সব অংশীদারের অনুমোদনের পর ওই নথিটি উন্মুক্ত করা হবে।

তবে পশ্চিমা একাধিক কূটনীতিক সূত্র থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশের জাতীয় প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদান পরিকল্পনার নথিটি উন্নয়ন সহযোগীরা গত সপ্তাহে পেয়েছেন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় চিকিৎসাসামগ্রী ও যন্ত্রপাতি কেনাকাটাসহ ৬টি খাতে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩০ কোটি ডলারের চাহিদার কথা বলা হয়েছে।

জাতীয় প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদান পরিকল্পনা নথিতে নজরদারি ও পরীক্ষাগার সহায়তা, সংক্রমণ শনাক্তকরণ ও বাংলাদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিমানবন্দর ও সীমান্ত এলাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) তৈরি করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এতে দেশে করোনা পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়াতে ল্যাবরেটরি কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর সব পরীক্ষাগার সচল করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের সব জেলায় জটিল ও গুরুতর করোনা রোগীর জন্য আইসিইউ প্রস্তুত রাখার প্রয়োজনীয়তারও উল্লেখ রয়েছে।

জাতিসংঘের একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের চাহিদার ওই অর্থ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, উন্নয়ন সহযোগী, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কাছে চাওয়া হতে পারে।

জাতিসংঘের গত শনিবারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ, নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারত্বে অতি দ্রুততার সঙ্গে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন, এই ভাইরাসটির ঝুঁকির ব্যাপারে ব্যাপকভাবে অবহিত করা, সামাজিক দূরত্ব, সামাজিক সুরক্ষা এবং বিদ্যালয় ও জনসমাগম হয় এমন স্থানগুলো বন্ধ করে দেওয়া। বৈশ্বিক স্বীকৃত যে মডেলিং পদ্ধতির দ্বারা ওই নথিটি পরিচালিত, তাতে দেখানো হয়েছে ওই ভাইরাসটির বিস্তার রোধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এই মহামারির কতটা বিস্তার ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়া কমানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তার সঙ্গে জাতিসংঘ পুরোপুরি একমত ও সহযোগিতা করতে তৈরি আছে।

জাতিসংঘ মনে করে, ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া রোধ করার জন্য অতি দ্রুত কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে তা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই বাংলাদেশে এখন যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে তা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। এর ফলে, সরকার ও জাতিসংঘের সংস্থা, নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দেশব্যাপী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরও জোরদার করার জন্য বেশ কিছুটা সময় পাবে এবং তার ফলে বাংলাদেশ সরকারকে এই মহামারি দমন করতে সহযোগিতা করতে পারবে।