'প্রতি ঘণ্টায় মৃত্যুর খবর পেলে মনটা কেমন লাগে বলুন?'

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ইতালির সমুদ্রতীরের ব্যস্ততম ও কর্মচঞ্চল শহর নাপলি। ওই শহরে বাংলাদেশের ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার মানুষ কাজ করেন। পর্যটনশিল্প আর শিল্পকারখানার জন্য শহরটি বিখ্যাত। সহজে কর্মসংস্থান হয়, তাই প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে এটি পছন্দের শহর।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ইতালির আর সব শহরের মতো নাপলিও এখন ভুতুড়ে শহর। প্রাণচঞ্চল শহরটা কেমন যেন মৃত্যুপুরী হয়ে গেছে। প্রতি ঘণ্টায় মৃত্যুর খবর শুনে শুনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ঘরবন্দী হয়ে আতঙ্ক–উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। শহরটির শিল্পকারখানা আর সমুদ্রসৈকত বন্ধ। ফলে বাংলাদেশিদের ব্যবসা–বাণিজ্য ও কাজও বন্ধ আছে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থ সংকটে পড়েছেন অনেকে।

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার সোনারবাজার এলাকার স্বপন হোসেন ২০০৫ সালে ইতালি যান। কয়েকটি শহর ঘুরে বর্তমানে তিনি নাপলির একটি শিল্পকারখানায় কাজ করেন। ইতালিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে স্বপনের কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনি মেসেঞ্জারে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই সপ্তাহ হলো ঘরবন্দী। খাবার আর ওষুধ কেনার জন্য শুধু বের হওয়া যায়। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছেন। ঘরের খাবার শেষ হয়ে আসছে। বাকি দিনগুলো কীভাবে কাটাব, আল্লাহই জানেন।’

স্বপন হোসেনের স্ত্রী রাশেদা আক্তার নড়িয়াতেই থাকেন দুই সন্তানকে নিয়ে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বামী ইতালিতে মৃত্যুপুরীতে ঘরবন্দী। দুই শিশুসন্তান নিয়ে আমিও গ্রামে ঘরবন্দী। আল্লাহই জানেন কেন এমন অবস্থা হলো। আমরা দুজন দুই মেরুতে বসে একই সমস্যা মোকাবিলা করছি। জানি না কবে আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরব!’

নড়িয়ার ভূমখারা গ্রামের সিদ্দিক হাওলাদার নাপলির সমুদ্রসৈকতে ব্যবসা করেন। লকডাউনে ওই সমুদ্রসৈকতে পর্যটক আসা বন্ধ। তাই ব্যবসাও বন্ধ। আপাতত ঘরে আটকা পড়েছেন তিনি। মুঠোফোনে গতকাল সোমবার রাতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইতালিকে মানুষ বলে মানবতার দেশ। সেই ইতালি এখন মৃত্যুপুরী। হাসপাতালগুলোয় মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এমন একটি প্রাদুর্ভাবে মানুষ মারা যাচ্ছেন যে কেউ কাছেও যেতে পারছেন না। আতঙ্কে কাটছে আমাদের প্রতিটি ক্ষণ।’

ইতালির আরেক শহর মিলান। ওই শহরেও অন্তত ১২ হাজার বাংলাদেশি থাকেন। ইতালিতে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে এই শহরে। এখানে পিৎজা ক্লাব নামের একটি খাবার বিক্রি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন নড়িয়া পৌর এলাকার বাসিন্দা শোয়েব আহম্মেদ। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটি। ওই প্রতিষ্ঠানের সব কর্মীকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। তিন সপ্তাহ ধরে ঘরবন্দী তাঁরা। তিনি গতকাল মুঠোফোনে বললেন, ‘কী অবস্থার মধ্যে আছি বোঝাতে পারব না। প্রতি ঘণ্টায় মৃত্যুর খবর পেলে কেমন লাগে বলুন? দু-তিন সপ্তাহ ধরে এই অবস্থা চলছে। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে আটকে আছি। জানি না কবে মুক্তি মিলবে।’