৬ দিনে ৫ হাসপাতালে ঘুরেও মেয়েকে ভর্তি করাতে পারেননি

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার স্কুলছাত্রী সানজিদা ইসলাম সুমাইয়া (১৬) সপ্তাহখানেক আগে সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়। গত ২৬ মার্চ শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় তার পরিবার। সেখানকার এক চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা বলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

ওই দিন সন্ধ্যায় সানজিদার অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাৎক্ষণিক এক্স-রে করিয়ে প্রতিবেদন দেখার পর চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তির পরামর্শ দেন। পরে রাত একটার দিকে ওই স্কুলছাত্রীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে মেয়েটিকে সেখান থেকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। তখন রাত তিনটা। সেখান থেকে চট্টগ্রাম সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে যেতে বলা হয়। রাতে ওই হাসপাতালের সেবা বন্ধ থাকে। তাই শুক্রবার সকাল আটটার দিকে মেয়েটিকে চট্টগ্রাম সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেফারেন্স ছাড়া করোনাভাইরাসের টেস্ট করাতে অস্বীকৃতি জানান। পরে একজন চিকিৎসক জ্বরের ওষুধ দিয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা বলেন।

এরই মধ্যে অসুস্থ সানজিদার বাবা রফিকুল ইসলাম চট্টগ্রামের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন করোনাভাইরাস পরীক্ষার প্রতিবেদন ছাড়া কোনো হাসপাতালে রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। কোনো উপায় না পেয়ে অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে ফেরেন বাবা। গত রবি ও সোমবার দুদিন মেয়েকে নিয়ে বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু মেয়ের অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাই ফের মেয়েকে চিকিৎসা করানোর চেষ্টা শুরু করেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের এক পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে সানজিদার করোনা পরীক্ষা করা হয়। আজ বুধবার পরীক্ষার প্রতিবেদনে দেখা যায় নেগেটিভ, অর্থাৎ মেয়েটি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয়।

এ ঘটনায় সানজিদার এক স্বজন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। সেই স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, মেয়েটির বাবা ও এক স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসব ঘটনা জানা যায়।

আজ দুপুরে অসুস্থ সানজিদার বাবা রফিকুল ইসলাম আক্ষেপ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে পাঁচটি হাসপাতালে গেলাম, কোনো হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করাতে পারলাম না, চিকিৎসা দিতে পারলাম না। বিষয়টা দুঃখজনক। অথচ মেয়েটির করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ।’

মেয়ের বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁর মেয়ের অবস্থা বেশি ভালো নয়। সে এখনো বমি করে, গায়ে জ্বর আছে। হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু কোনো হাসপাতাল ভর্তি নিচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘করোনার টেস্ট করানোর জন্য বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে ঠিকানা দেওয়া হলেও ওরা ঠিকমতো টেস্ট করাচ্ছে না। টেস্ট করাতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’

উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই রোগীর বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে বলেছি।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাজীব পালিত প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোগী হাসপাতালে এসেছিল। তেমন সমস্যা না। তাকে আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছিলাম। করোনা টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে জানলাম।’