সরকারকে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে

ইলিয়াস কাঞ্চন
ইলিয়াস কাঞ্চন

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রথম দিকে বেশ কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। যেমন ছুটির ঘোষণা আগে দেওয়া হলো আর গণপরিবহন বন্ধ করা হলো পরে। ফলে গণপরিবহন চালু থাকায় ছুটির ঘোষণা শুনেই হাজার হাজার মানুষ ‘উৎসব’ করে রাজধানী ছেড়ে গেছে। এ কারণে সারা দেশেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। ঘরে থাকতে হবে, সরকারের নির্দেশনা এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। একই সঙ্গে সরকারকে দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে সামান্য অসতর্কতা, গুরুত্ব না দেওয়ার মতো ঘটনা শুধু নিজের জন্যই নয়; পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বড় বিপদ নিয়ে আসতে পারে। এখানে একটি বিষয় বলতে চাই, প্রথমে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলো সাধারণ ছুটির সময়ে নিত্যপণ্য পরিবহন করা গাড়ি চলবে। তবে পণ্য পরিবহনের গাড়িগুলো যাত্রী নিতে পারবে না। কিন্তু ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার দিন থেকেই দেখা গেল, ট্রাকে করে মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাচ্ছে। ট্রাকে মানুষ পরিবহনের কারণে দুর্ঘটনাও ঘটেছে।

কাউকে নিয়ম ভঙ্গ করার সুযোগ দিলে, নির্দেশনা দিয়েও তা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখানো হলে সমাজ-রাষ্ট্রে এর খারাপ প্রভাব পড়ে। অপরাধ করে পার পেয়ে গেলে অপরাধপ্রবণতা বাড়ে। রাস্তায় গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করার সময়ও দেখা গেছে, হঠাৎ করেই গণপরিবহন চলাচল কমে যায়। পরে আইন প্রয়োগ শিথিল করা হলে আবার রাস্তায় গাড়ি চলাচল শুরু হয়। নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়নের সময়ও একই ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলার ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। নিয়ম অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে–এই বার্তা সরকারকে দিতে হবে।

গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় শ্রমিকেরা বেশি বিপদে পড়েছেন। এ ক্ষেত্রে মালিকেরা অবশ্যই শ্রমিকদের খাওয়াদাওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে। গণপরিবহন যখন চলত, তখন শ্রমিকদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হতো। তাই এখন মালিকদের পাশাপাশি শ্রমিক সংগঠনগুলোকেও শ্রমিকদের খাওয়াদাওয়াসহ সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই দুঃসময়ে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব তারা এড়াতে পারে না। দেশের স্বার্থে মালিক-শ্রমিক সবাইকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে হবে। নিজের কথা, মানুষের কথা ও দেশের কথা চিন্তা করে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, যাতে এটি ভয়াবহ আকার ধারণ না করে। 

ইতালি, যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলো করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না, হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশে এখনো সরকারের নির্দেশনা না মেনে যাঁরা ঘর থেকে বের হচ্ছেন, তাঁদের কারণে ঝুঁকি আরও বাড়ছে।

ইলিয়াস কাঞ্চন, চিত্রনায়ক ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)