'কী কষ্টে আছি কেউ বুঝবে না, এভাবে জীবন চলে?'

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে ঘরের বাইরে বের হতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এ অবস্থায় শরীয়তপুরে অন্তত ৭০ থেকে ৮০ হাজার শ্রমজীবী মানুষ বিপাকে পড়েছেন।

এসব মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার কাজ শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন, সাংসদ, রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও সংগঠন। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে বলছেন ভুক্তভোগীরা।


জেলার পরিবহনশ্রমিক, সেলুনশ্রমিক, লন্ড্রিশ্রমিক, ভ্রাম্যমান মাল বিক্রেতা, হকার, ফুটপাতের ক্ষুদ্র বিক্রেতা, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মুচি, হোটেলশ্রমিক, ছুটা কাজের মানুষ হিসেবে কর্মরত নিম্ন আয়ের মানুষ এখন সীমাহীন দুর্ভোগে।


শরীয়তপুর পৌরসভার কাশাভোগ এলাকার বাসিন্দা রামপ্রসাদ ঋষি অনেক দিন থেকে লিভারের সমস্যয় ভুগছেন। বাংলাদেশ ও ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে বসতবাড়ি বিক্রি করেছেন। একাধিক মানুষের কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। তাঁর বাবা রতন ঋষি গ্রামের একটি বাজারে মুচির কাজ করেন। তাঁর একার আয়ে সংসারের চাকা ঘুরছে না। অনেকটা বাধ্য হয়ে অসুস্থ শরীর নিয়ে রামপ্রসাদকে বাজারে মুচির কাজ করতে হচ্ছে। এমন অবস্থা এই সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ মানুষের। হাট-বাজার বন্ধ, মানুষ ঘরবন্দী। ফলে তাঁদের আয় নেই। কিন্তু পেট তো আর বন্ধ থাকে না। খাদ্য সহায়তা নিয়ে তাঁদের পাশে কেউ নেই বলে জানালেন তাঁরা। অসহায় রামপ্রসাদ বললেন, ‘আমরা কী কষ্টে আছি, তা কেউ বুঝবে না। এভাবে কি জীবন চলে?’


মানুষের বাসা ও খাবার হোটেলে মসলা বাটা এবং পানি সরবরাহের কাজ করেন সদর উপজেলার বাঘিয়া গ্রামের পান্না আক্তার। পান্নার স্বামী নেই। দুই মেয়ে স্কুলে যায়। তাঁর একার আয়ে তিনজনের পরিবারটা চলে। ১০ দিন ধরে পান্নার কোনো কাজ নেই। হাতে যা টাকাপয়সা ছিল, তা দিয়ে কিছু বাজার-সদাই করেছেন। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে চলবেন, সে দুশ্চিন্তায় অস্থির তিনি। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সরকারি -বেসরকারি কোনো সহায়তা পাইনি। আমাদের মতো হাজার হাজার মানুষ না খেয়ে আছে। কে তাদের খবর রাখে?’

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে গত শনি ও রোববারে জেলার বিভিন্ন গ্রামে ৩ হাজার ৯০০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল ও ২০০ করে টাকা দেওয়া হয়েছে। শরীয়তপুর–২ আসনের সাংসদ ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম নড়িয়া ও সখিপুরের ২৪টি ইউনিয় ও নড়িয়া পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১২ হাজার ৫০০ ব্যক্তির মধ্যে চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ ও সাবান বিতরণ করেছেন। শরীয়তপুর–১ আসনের সাংসদ ইকবাল হোসেন অপু সদর উপজেলা ও জাজিরা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ২ হাজার ৭০০ পরিবারের মধ্যে চাল ও ডাল বিতরণ করেছেন।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, দিনমজুর, নিম্ন আয়ের মানুষ, অসহায়–দুস্থদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া অব্যাহত থাকবে। আগামী সোমবারের মধ্যে আরও ৪ হাজার ৫০০ পরিবারকে চাল, ডাল ও তেল দেওয়া হবে। সে জন্য ৪৫ মেট্রিক টন চাল বিভিন্ন উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।