পদ্মা সেতুর ৩৫০ কোটি টাকার সরঞ্জাম বন্দরে আটকা

প্রথম আলাে ফাইল ছবি
প্রথম আলাে ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের কারণে ২৫ মার্চ থেকে টানা ছুটি চলছে সারা দেশে। তবে এর মধ্যেও এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। কিন্তু মূল সেতুর বিভিন্ন সরঞ্জাম আমদানির পর আটকে আছে বন্দরে। প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা মূল্যের এসব সরঞ্জাম খালাস করা না গেলে সেতুর নির্মাণকাজে ধীর গতি আসতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এই পণ্যগুলো দ্রুত খালাসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পদ্মা সেতু প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি।

৯ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর ৬ দশমিক ১৫ অংশ নদীর ওপর। নদীর তলদেশে নরম মাটির স্তর থাকায় পদ্মা সেতুর ২২টি পিয়ারের নকশায় পরিবর্তন করা হয়। ২০১৯ সাল থেকে দ্রুতই এগিয়ে চলতে থাকে নির্মাণকাজ। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২৮ মার্চ পর্যন্ত ১৫ মাসে ২০টি স্প্যান বসানো হয়। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে চীনে আটকা পড়েন চীনা কর্মীরা। এর পরও সেতুর কাজ শিডিউল অনুযায়ী চলতে থাকে। সব শেষ গত ২৮ মার্চ সেতুর ২৭তম স্প্যানটি বসানো হয়। এরপর ৩১ মার্চ ৪২টি পিয়ারের মধ্যে সব শেষ পিয়ারের কংক্রিটিংয়ের কাজ শেষ হয়। এর পাশাপাশি মূল সেতুর ওপর রেলওয়ে ও রোডওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। সব মিলিয়ে মূল সেতুর ৮৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি এপ্রিলে আরও দুটি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। এর মধ্যে এপ্রিলের মাঝামাঝি ২০ ও ২১ নম্বর পিয়ারের ওপর একটি স্প্যান এবং এর সপ্তাহখানেক পর এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে ১৯ ও ২০ নম্বর পিয়ারের ওপর আরও একটি স্প্যান বসানো হতে পারে। এপ্রিল মাসে দুটি স্প্যান বসানোর পর পদ্মা সেতুর প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দৃশ্যমান হতে পারে।

চীনের অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার পর সেখান থেকে শেষ দুটি স্প্যানের অংশসহ সেতুর বিভিন্ন সরঞ্জাম আসতে শুরু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে গ্রাউটিং ম্যাটারিয়াল, ওয়াটার প্রুফ সলিউশন, রংসহ প্রায় অর্ধশত সরঞ্জাম। গত ১৮ মার্চ এর মধ্যে কিছু সরঞ্জাম চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে আসে। এর পর ২৪ মার্চ আরও কিছু সরঞ্জাম বন্দরে চলে আসে। কিছু সরঞ্জাম খালাসের প্রক্রিয়া চলতে থাকায় করোনাভাইরাসের কারণে টানা দীর্ঘ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ কারণে এসব সরঞ্জাম আটকে পড়ে চট্টগ্রাম বন্দরে। সরঞ্জাম খালাস করতে না পারায় সেতুর নির্মাণকাজের গতি ধীর হতে পারে। এই আশঙ্কার কথা জানিয়ে বন্দরে আটকে পড়া সরঞ্জাম দ্রুত খালাসের আবেদন করে গতকাল ৩ এপ্রিল পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আটকে পড়া চীনা প্রকৌশলী ও কর্মীরা বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। এখন সেতু নির্মাণে লোকবল সংকট নেই। সব পিয়ার উঠে গেছে। স্প্যান বসানোর জন্য এগুলো প্রস্তুত হয়ে গেছে। রোডওয়ে আর রেলওয়ের সব স্ল্যাব তৈরির কাজ সম্পন্ন। এখন বেশ কিছু সরঞ্জাম আমদানি করা হচ্ছে। আরও কিছু সরঞ্জাম আসবে। এর মধ্যে যে সরঞ্জাম এসেছে সেগুলো আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের (সিসিআইই) অনুমতি নিয়ে বন্দর শুল্ক কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র মিললে বন্দর থেকে খালাস করা প্রয়োজন।

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরে পণ্য আটকে থাকার বিষয়টি আমাদের নলেজে আছে। পণ্যগুলো দ্রুত খালাস করাতে বিশেষ ব্যবস্থা আমরা নেব।’