নির্ধারিত সময়ে ইন্টার্নশিপে যোগ না দেওয়ায় জটিলতা

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের এম-৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ে হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে যোগ না দেওয়ায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। ওই ব্যাচের ১৮৮ শিক্ষার্থীকে ইন্টার্নশিপের সুযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দেশের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানেও এই শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের সুযোগ না দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে ছাত্রাবাস বন্ধ এবং নির্ধারিত সময়ে কলেজ থেকে সনদপত্র না পাওয়ায় তাঁরা কাজে যোগ দিতে পারেননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে তাঁরা শঙ্কিত। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রুতই শিক্ষার্থীদের সনদপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে জটিলতার অবসান করা হবে।

গত ২ এপ্রিল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাছির উদ্দীন আহমেদ ও উপপরিচালক লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে ২০১৯ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত পেশাগত ফাইনাল এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ইন্টার্ন চিকিৎসকদের (এম-৫২ ব্যাচ) ২০২০ সালের ১৪ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ তারিখের মধ্যে যোগদান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। অদ্যাবধি (২ এপ্রিল পর্যন্ত) এই ব্যাচের কেউ যোগদানপত্র দাখিল করেনি বা যোগদান করেননি।

চিঠিতে বলা হয়, এত সংখ্যক ইন্টার্ন চিকিৎসক একসঙ্গে যোগদান না করার ফলে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। তাই এম-৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা যেন কোনো প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ গ্রহণ করার সুযোগ না পান, এ বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।

হাসপাতালের পরিচালকের এমন সিদ্ধান্তে হতবাক শিক্ষার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এম-৫২ ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, গত ৯ মার্চ তাঁদের এমবিবিএস লিখিত পরীক্ষার ফলাফল বের হয়। স্বাভাবিক কারণেই সনদপত্র ও অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি হতে ১৫-২০ দিন সময় লেগে যায়। এর মাঝেই ১৮ মার্চ করোনা ইস্যুতে বাগমারা এলাকায় আবাসিক হল খালি করার নির্দেশনা দেয় মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ। এতে সব শিক্ষার্থী হল ত্যাগ করে যে যার বাড়ি চলে যায়। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের জন্য হাসপাতালের ভেতরে নির্ধারিত আবাসিক হলেও তাঁরা সিট বরাদ্দ পাননি। আবাসন ব্যবস্থা না হওয়া এবং কাগজপত্রে অনুমোদন না পাওয়ায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তাঁরা কাজে যোগ দিতে পারেননি।

এমন পরিস্থিতিতে ইন্টার্নশিপের সুযোগ বাতিলের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এর ফলে ব্যাচের ১৮৮ জন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ শঙ্কার মধ্যে পড়েছে। এ জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতাকেও দায়ী করেন তাঁরা। আজ রোববার সকালে অধ্যক্ষ কার্যালয়ে এসব সমস্যার কথা উল্লেখ করে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাছির উদ্দীন আহমেদ বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট এই দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে ইন্টার্নশিপের জন্য ২৫ মার্চের মধ্যে কাগজপত্রসহ রিপোর্ট করার কথা ছিল। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সবার কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু তাদের কেউ কাজে যোগ না দেওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এখন কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা চলছে।

মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ চিত্তরঞ্জন দেবনাথ বলেছেন, এই জটিলতা আগামী দু/একদিনের ভেতরেই কেটে যাবে। সদ্য পাসকৃতদের কাগজপত্র তৈরি করে দ্রুততম সময়েই তাদের দিয়ে দেওয়া হবে। তাঁরা যেন অচিরেই কাজে যোগ দিতে পারে সেই সুরাহার চেষ্টা করা হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কোনো সমন্বয়হীনতা নেই। শিগগির এই ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে।