জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন 'স্প্রে আশিক'

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের বিভিন্ন পাড়ামহল্লা, মসজিদ, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, যানবাহন, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন তরুণ ব্যবসায়ী আশিকুল আলম। ৩ মার্চ, পূর্ব পাইকপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর। প্রথম আলো
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের বিভিন্ন পাড়ামহল্লা, মসজিদ, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, যানবাহন, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন তরুণ ব্যবসায়ী আশিকুল আলম। ৩ মার্চ, পূর্ব পাইকপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর। প্রথম আলো

কখনো পাড়ামহল্লা, বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে। আবার কখনো হাসপাতাল, ক্লিনিক, মসজিদ, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন তিনি। বাদ যায় না রাস্তার রিকশা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলও। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন আশিকুল আলম (৩০)। গত ১০-১২ দিন ধরে পানির সঙ্গে ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে কাঁধে ১৮ লিটারের জীবাণুনাশক যন্ত্র নিয়ে আশিকুল কাজ করে যাচ্ছেন। এখন সবাই তাঁকে ‘স্প্রে আশিক’ বলে ডাকে।

আশিকুল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মুন্সেফপাড়া মৃত মো. হাবিব আলমের ছেলে। তাঁর পেশা ব্যবসা। ২০১২ সালে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেছেন। পরে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায় সম্পৃক্ত হন।

আশিকুল বলেন, ‘মানুষ করোনাভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত। আমরা কখনো এ রকম পরিস্থিতি দেখিনি, অভিজ্ঞতাও নেই। আতঙ্ক দিনদিন বাড়ছে। শহর জুড়ে চলছে মাইকিং। যে যেভাবে পারছেন, এগিয়ে আসছেন। তাই মানুষের নিরাপত্তার চিন্তা থেকেই জীবাণুনাশক ছিটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করি। পরিবেশ, রাস্তাঘাট, সরকারি দপ্তর, পাড়া মহল্লা, হাসপাতাল ও মসজিদসহ সবকিছু যেন জীবাণুমুক্ত থাকে এই জন্যই আমি এই কাজ করছি। আর মানুষকে সচেতন করাই আমার প্রধান লক্ষ্য। এটা নাগরিক হিসেবে আমার দায়িত্ব।’

আশিকুল জানান, তিনি গত ২৪ মার্চ ওই জীবাণুনাশক ছিটানোর যন্ত্রটি কিনেছেন। ওইদিন দুপুরে যন্ত্রটি নিয়ে তিনি নিজের ঘর, এলাকার বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটে জীবাণুনাশক ছিটিয়েছেন। ৩১ মার্চ দুপুরে নিজের টাকায় ৫০টি মাস্ক কিনে রাস্তায় চলাচলকারী সাধারণ মানুষ ও ভিক্ষুকদের মধ্যে বিতরণ করেছেন।

গতকাল রোববার জেলা শহরের পশ্চিম পাইকপাড়ার বিভিন্ন বাড়িঘর কীটনাশক ছিটিয়েছেন আশিকুল। এর আগের দিন জেলার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জামে মসজিদ, নার্সদের ডরমিটরি, বাগানবাড়ি এলাকা ও জেলা শহরের জুবিলি রোড জামে মসজিদে জীবাণুনাশক ছিটিয়েছেন। তিনি বলেন, নিজ এলাকা মুন্সেফপাড়া ছাড়াও তিনি জেলা শহরের পাইকপাড়া, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল, পশ্চিমঘেঁষা এলাকার আলিয়া মাদ্রাসা মোড়, ফুলবাড়িয়া, সদর উপজেলার বড় হরণ এলাকার রাস্তাঘাট এবং কিছু বাড়ি ঘরে কাঁধে করে এই যন্ত্র নিয়ে জীবাণুনাশক ছিটিয়েছেন। এমনকি রাস্তাঘাটে চলাচলকারী রিকশা, ইজিবাইকই, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনও বাদ পড়েনি।

আশিকুল আলম বলেন, সমাজের মানুষের জন্য কাজ করতে তাঁর যেমন ভালো লাগে, তেমনি ঘুরে-বেড়াতেও ভালো লাগে তাঁর। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তিনি মিশর ঘুরে বাংলাদেশে আসেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসেই ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, গ্রিস, তুরস্ক, জর্ডান ভ্রমণ করেছেন। এ ছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, পেরু, বলিভিয়া, যুক্তরাজ্য, ভারত, ইতালি, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, কোরিয়া, জাপান, সুইজারল্যান্ড, ভ্যাটিক্যান সিটিসহ ৩০ টির বেশি দেশ ঘুরেছেন। আশিকুল জানান, ২০১০ সালে বিদেশ ভ্রমণ শুরু করেন তিনি। এ পর্যন্ত পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে ছয়টি দেখেছেন। মেক্সিকোর চিচেন ইৎজা দেখার বাকি আছে। আর ইতালির কলোসিয়াম ও জর্ডানের পেত্রায় বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন তিনি।