করোনা যুদ্ধের নির্দেশিকা

‘হ্যান্ডবুক অব কোভিড-১৯ প্রিভেনসন অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট’ নির্দেশিকার প্রচ্ছদ।
‘হ্যান্ডবুক অব কোভিড-১৯ প্রিভেনসন অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট’ নির্দেশিকার প্রচ্ছদ।

এটি একটি নজিরবিহীন যুদ্ধ। সমগ্র মানবজাতির শত্রু একটাই, নতুন করোনাভাইরাস। যুদ্ধক্ষেত্র হচ্ছে হাসপাতাল। স্বাস্থ্যকর্মীরাই এখানে সৈনিক। তাঁদের জন্য নির্দেশিকা। শিরোনাম ‘হ্যান্ডবুক অব কোভিড-১৯ প্রিভেনসন অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট’। চীনে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও শুশ্রূষায় অংশ নেওয়া চিকিৎসকেরা এই নির্দেশিকা তৈরি করেছেন।

শুরুতে অধ্যাপক টিংবো লিয়ান সম্পাদকীয় নোটে বলেছেন, একটি অপরিচিত ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে প্রতিকারের উপায় হচ্ছে অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা। টিংবো লিয়ান জেজিয়াং ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের দ্য ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হসপিটালের চেয়ারপারসন। এই হাসপাতালে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত ১০৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। এর মধ্যে ৭৯ জনের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। কিন্তু কোনো রোগী মারা যাননি। চীনের ও এই হাসপাতালের চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে ৬৪ পৃষ্ঠার নির্দেশিকা।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৈশ্বিক চেহারা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববাসীকে। তার ভিত্তিতে বাংলাদেশেও প্রতিরোধ ও চিকিৎসার নির্দেশনা তৈরি হয়েছে।

আইসোলেশন নিয়ে এ দেশে এখন বিস্তর কথা হচ্ছে। চীনের নির্দেশিকাটির শুরুতেই আছে আইসোলেশন এলাকা ব্যবস্থাপনার কথা। এলাকাটির একটি বিস্তারিত নকশার বর্ণনা নির্দেশিকায় আছে। সংক্রমিত, সম্ভাব্য সংক্রমিত ও সংক্রমণহীন মানুষের জন্য কোন ধরনের এলাকা হবে, তা পরিষ্কার করে বলা আছে। এখানেই পরীক্ষার বিস্তর আয়োজন। এখানেই ঠিক হবে কাকে হাসপাতালে রাখতে হবে, কাকে ভর্তি না করে আলাদা করে রাখতে হবে। আর কাকে বাড়ি যেতে বলা হবে।

এরপর আইসোলেশন ওয়ার্ডের বর্ণনা। ওয়ার্ডে তিনটি ভাগ—পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ড, মূল ওয়ার্ড ও আইসিইউ এলাকা। ওয়ার্ডের প্রয়োজনীয়
সামগ্রীর বর্ণনা আছে। রোগী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে: আত্মীয়স্বজনের আসা-যাওয়া ও নার্সিং সেবা কমাতে হবে। রোগীরা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আরও সংক্রমণ যাতে না ছড়ায়, সে বিষয়ে রোগীদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে। সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করা, থুতু ফেলা, ঠিকভাবে হাত ধোয়া—এসব ব্যাপারে রোগীদের সঠিক নির্দেশনা দিতে হবে।

>

‘হ্যান্ডবুক অব কোভিড-১৯ প্রিভেনসন অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট’ শিরোনামের এই নির্দেশিকায় রয়েছে চীনের অভিজ্ঞতা।

নির্দেশিকাটি তিন ভাগে বিভক্ত। প্রথম অংশে রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা আলোচনা করা হয়েছে। এখানে পৃথক পাঁচটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা বিষয়ে। এখানে ১৭টি পৃথক বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তৃতীয়াংশে নার্সিং বিষয়ে বর্ণনা আছে। এখানে ছয়টি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

নির্দেশিকায় ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক পরা ও পোশাক খুলে রাখার ব্যাপারে সচিত্র বর্ণনা আছে। ভাইরাসটির সংক্রমণক্ষমতা খুবই বেশি এবং যেকোনো সামান্যতম অসতর্কতার কারণে সংক্রমণ ঘটে যেতে পারে—সেই কারণে পোশাকের ব্যাপারে এত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালের দেয়াল, মেঝে ও কক্ষের বায়ু জীবাণু ও দূষণমুক্ত করার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রোগীর এবং সন্দেহভাজন রোগীর পোশাক পরিষ্কার করার জন্য পৃথক নির্দেশনা আছে।

নির্দেশিকার শেষ অংশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত মৃদু, মাঝারি, তীব্র ও জটিল উপসর্গের রোগীকে কী চিকিৎসা দিতে হবে, তার বর্ণনা দেওয়া আছে।