মানিকগঞ্জে তাবলিগের ৫৪ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে

মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার আঞ্চলিক জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ৫৭ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার আঞ্চলিক জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ৫৭ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মানিকগঞ্জে আসা তাবলিগ জামাতের ৫৪ জন মুসল্লিসহ ৫৭ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। রোববার দিবাগত রাতে ৪৯ জন ও আজ সোমবার আটজনকে মানিকগঞ্জ পৌর শহরের কেওয়ারজানী এলাকায় অবস্থিত আঞ্চলিক জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে তাঁদের কোয়ারেন্টিন করা হয়।

জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রোববার রাত ১২টার দিকে দুটি পিকআপ ভ্যানে করে তাবলিগ জামাতের ৪৬ জন মুসল্লি মানিকগঞ্জে আসছিলেন। জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার ধল্লা এলাকায় পুলিশের তল্লাশি চৌকির কাছে আসলে পুলিশ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। মুসল্লিরা জানান, তাঁরা শেরপুর থেকে তাবলিগ জামাতে মানিকগঞ্জে এসেছেন।

তল্লাশি চৌকিতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুনা লায়লা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সাত্তার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী মোল্লাহকে অবহিত করেন। এরপর জেলা প্রশাসক এস ফেরদৌস, পুলিশ সুপার রিফাত রহমান এবং সিভিল সার্জন আনোয়ারুল আমিন আখন্দ মুসল্লিদের বিষয়ে পরামর্শ করে তাঁদের কোয়ারেন্টিনে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। পরে রাত ২টার দিকে তাবলিগের ৪৬ মুসল্লি, পিকআপ ভ্যানের দুজন চালক ও একজন সহকারীসহ মোট ৪৯ জনকে মানিকগঞ্জ পৌর শহরের কেওয়ারজানী এলাকায় আঞ্চলিক জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়।

পুলিশ সুপার রিফাত রহমান জানান, আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে হরিরামপুর উপজেলার আন্দারমানিক এলাকায় নৌকায় করে তাবলিগ জামাতে আসা আটজন মুসল্লিকে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তাঁরা মাগুরা থেকে মানিকগঞ্জে তাবলিগ জামাতে আসছিলেন। এরপর দুপুরে তাঁদের আঞ্চলিক জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক এসএম ফেরদৌস বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে রোববার গভীর রাত থেকে আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত জেলায় তাবলিগ জামাতে আসা ৫৪ জন মুসলিসহ মোট ৫৭ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তাঁদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন আনোয়ারুল আমিন আখন্দ। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের সেখানে ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের করোনার উপসর্গ আছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যকর্মীরা দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ মার্চ তাবলিগ জামাতের ১৩ জন মুসল্লি সিঙ্গাইর পৌর এলাকার একটি মাদ্রাসায় আসেন। কয়েক দিন আগে তাঁদের মধ্যে এক ব্যক্তির (৬০) সর্দি, জ্বর ও কাশি শুরু হয়। এরপর গত শুক্রবার রাতে ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) তাঁর শরীরের নমুনা পরীক্ষা করেন। শনিবার রাত ১১টার তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত করে আইইডিসিআর। এর পর থেকে তাঁকে আইইডিসিআর-এর তত্ত্বাবধানে আইসোলোশনে রাখা হয়।

এরপরপরই গত শনিবার রাত ১২ টায় সিঙ্গাইর পৌরসভা লকডাউন ঘোষণা করা হয়। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা তাবলিগ জামাতের বাকি ১২ মুসল্লিসহ ১৮ জনকে ওই মাদ্রাসায় কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। এ ছাড়া আক্রান্ত মুসল্লির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের পরিবারের ১০ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।