শিবচরে আক্রান্ত বৃদ্ধের সংস্পর্শে আসা ২০ জন শনাক্ত হয়নি, করোনা ছড়ানোর শঙ্কা

নতুন করে করোনা-আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় পুরো শিবচর উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। উপজেলার সকল প্রবেশপথ বাঁশ ও গাছের গুড়ি দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সোমবার দুপুরে উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
নতুন করে করোনা-আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় পুরো শিবচর উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। উপজেলার সকল প্রবেশপথ বাঁশ ও গাছের গুড়ি দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সোমবার দুপুরে উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় মোট ১০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সর্বশেষ গত রোববার ৭২ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধের করোনা শনাক্ত হয়। তিনি এর আগে হাসপাতালে আইসোলেশনে ছিলেন। তখন পরীক্ষায় করোনা ‘নেগেটিভ’ এসেছিল। আইসোলেশন থেকে ফিরে তিনি বাধাহীনভাবে ঘুরে বেড়ানোয় এলাকায় করোনাভাইরাস ছড়ানোর শঙ্কা জেগেছে।

এলাকায় ফেরার পর ওই বৃদ্ধর সংস্পর্শে এসেছেন অন্তত ৭০ জন। ৫০ জনকে চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করেছে প্রশাসন। তবে বাকি ২০ জনের হদিস পায়নি তাঁরা। এই ২০ জন মূলত পথচারী, আশপাশের এলাকার বাসিন্দা বা অপরিচিত ব্যক্তি। বুধবার সকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, শিবচরে করোনাভাইরাসে সর্বশেষ আক্রান্ত হওয়া ওই বৃদ্ধ উপজেলার পাঁচ্চর ইউনিয়নের একটি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মূলত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইতালি থেকে আসা এক যুবকের শ্বশুর। ৭২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি এর আগে তাঁর স্ত্রী, পুত্রবধূ ও জামাতার ইতালি-ফেরত এক বন্ধুর সঙ্গে ১৪ দিন মাদারীপুর সদর হাসপাতালে আইসোলেশনে ছিলেন। গত ২৭ মার্চ ওই বৃদ্ধকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তবে বাড়িতে গিয়ে আরও সাত দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। আইসোলেশনে থাকাকালে পরীক্ষায় বৃদ্ধর করোনা ‘নেগেটিভ’ এসেছিল। তবে তাঁর স্ত্রী, পুত্রবধূ ও জামাতার সেই বন্ধুর ‘পজিটিভ’ আসে। এবার ওই বৃদ্ধসহ চারজনই করোনা ‘পজিটিভ’ হয়েছেন। অর্থাৎ তাঁরা চারজনই করোনায় আক্রান্ত। ইতালি-ফেরত ৩২ বয়সী যুবকটি বহেরাতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের একটি গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর সংস্পর্শে থাকা অন্তত ২৫টি পরিবারের সদস্যদের কোয়ারেন্টিন করে রেখেছে প্রশাসন।

এদিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালের আইসোলেশন থেকে ছাড়াপত্র পাওয়ার পর হাট-বাজারসহ এলাকায় বাধাহীনভাবে ঘুরে বেড়ান। তিনি মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েছেন। এমনকি এলাকার একটি মসজিদে মিলাদও দিয়েছেন। নির্দেশনা মেনে সাত দিন হোম কোয়ারেন্টিনে না থাকায় এলাকায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানতে চাইলে শিবচর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ বলেন, শিবচরে প্রথমে ৩১৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। বর্তমানে ১০১ জন হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। নতুন করে ৫০ জনকে কোয়ারেন্টিন করার তথ্য নিশ্চিত করেন তিনি। তবে তাঁরা ওই বৃদ্ধার সংস্পর্শে আসা কি না বা সংস্পর্শে এলেও শনাক্ত না হওয়া বাকি ২০ জনের ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

তবে মাদারীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) মো. আবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইইডিসিআর প্রতিনিধি দলের সহযোগিতায় ৭২ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধর সংস্পর্শে থাকা ৫০ জনকে আমরা শনাক্ত করে কোয়ারেন্টিনে রেখেছি। বাকি ২০ জন পথচারী বা ওই বৃদ্ধর অপরিচিত হওয়ায় তাঁদের খুঁজে বের করা সহজ নয়। আর দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়া ওই যুবকের সংস্পর্শে থাকা অন্তত ২৫টি পরিবারকে আমরা কোয়ারেন্টিন করেছি। কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রতিটি পরিবারকে খাবারসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। এরপরেও তারা যেন কোনোভাবেই ঘর থেকে বের না হতে পারে সে জন্য পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক, চৌকিদারসহ সাদা পোশাকে পুলিশ নিয়োজিত রাখা হয়েছে।’