করোনায় শিশুদের উপসর্গ কিছুটা আলাদা

কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত শিশুদের ঘন ঘন জ্বর বা কাশি না–ও থাকতে পারে। ছবি: রয়টার্স
কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত শিশুদের ঘন ঘন জ্বর বা কাশি না–ও থাকতে পারে। ছবি: রয়টার্স

চীন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ রোগটি কম মারাত্মক। এমনকি প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুদের মধ্যে এর উপসর্গও কিছুটা আলাদা। কোভিড-১৯ আক্রান্ত শিশুদের জ্বর, কাশি না–ও হতে পারে। 

গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এ বিষয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই গবেষণায় চীন থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ বৈশিষ্ট্য কেমন, তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়নি। অল্প কিছু উপাত্ত নিয়ে প্রাথমিকভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। 

ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখ থেকে এপ্রিলের ২ তারিখ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগারে নিশ্চিত হওয়া ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭৬০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৫৭২ জনের বয়স ১৮ বছরের নিচে। ১৮ বছরের ওপরে রয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ১৮৮ জন। 

গবেষণায় দেখা গেছে, শিশু রোগীদের (১৮ বছরের নিচে) ৭৩ শতাংশের জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টের লক্ষণ ছিল। অন্যদিকে প্রাপ্তবয়স্ক (১৮ থেকে ৬৪ বছর) রোগীদের ৯৩ শতাংশের এ লক্ষণ ছিল। আক্রান্ত রোগীর ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বা ১৪৭টি শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়, যা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় কম। এই গবেষণার অন্তর্ভুক্ত শিশু রোগীর তিনটি মারা যায়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১৪৭টি শিশুর মধ্যে ১৫টি শিশুকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার প্রয়োজন হয়। 

এই গবেষণা আগের পাওয়া গবেষণাকেই সমর্থন করে যে কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত শিশুদের ঘন ঘন জ্বর বা কাশি না–ও থাকতে পারে। শিশুদের মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ গুরুতর নয়। এখনো প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার হার বেশি। তবে সামাজিক দূরত্ব ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সব বয়সের জন্য জরুরি। কারণ, কম গুরুতর অসুস্থ রোগী বা লক্ষণবিহীন আক্রান্তও রোগের সংক্রমণ বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

বিশ্লেষণ করা ২ হাজার ৫৭২টি শিশুর গড় বয়স ১১ বছর। এর মধ্যে ৩২ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। ২৭ শতাংশ শিশুর বয়স ১০ থেকে ১৪ বছর। ১৫ শতাংশ শিশুর বয়স ১ বছরের নিচে। ১১ শতাংশের বয়স ১ থেকে ৪ বছরের মধ্যে এবং ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী ১৫ শতাংশ শিশু রয়েছে। ২ হাজার ৫৭২টি শিশুর মধ্যে ২ হাজার ৪৯০টি শিশুর লিঙ্গ পরিচয় জানা যায়। এদের মধ্যে ৫৭ শতাংশই ছেলেশিশু। অন্যদিকে ১৮ বছরের ওপরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৫৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্কই পুরুষ। 

চীন থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করেও প্রায় একই ধরনের ফলাফল পাওয়া গেছে। চীনে ১৬ বছরের নিচে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের ৪১ দশমিক ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে জ্বর হয়েছে, ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশের কাশি ছিল এবং ১ দশমিক ৮ শতাংশকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য নিয়ে করা গবেষণায় দেখা গেছে, ১৮ বছরের নিচে শিশুদের মধ্যে কোভিড-১৯–এর প্রকোপ কম। তবে এই বয়সের মধ্যে অপেক্ষাকৃত বেশি ঝুঁকিতে একদম ছোট শিশুরা। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১৪৭টি শিশুর মধ্যে ৫৯টি এবং আইসিইউতে থাকা ১৫টি শিশুর মধ্যে ৫টি একদম ছোট শিশু। 

গবেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে অল্প কিছুসংখ্যক মানুষের ওপর এই বিশ্লেষণ করা হয়েছে। চূড়ান্ত উপসংহারে যেতে আরও গবেষণার প্রয়োজন।