সামাজিক দূরত্ব মেনে সড়ক অবরোধ

খাবার চেয়ে সড়কে অবস্থান করে বিক্ষোভ। তবে সামাজিক দূরত্ব মেনে এ বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। ছবি: প্রথম আলো
খাবার চেয়ে সড়কে অবস্থান করে বিক্ষোভ। তবে সামাজিক দূরত্ব মেনে এ বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের বিস্তার মোকাবিলায় সবচেয়ে মোক্ষম অস্ত্র হলো বাসাবাড়ি থেকে বের না হওয়া। প্রয়োজনে বের হলেও মানুষে মানুষে ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখা। এ নির্দেশনা মেনেই শুক্রবার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের লোকজন কচুবাড়ি এলাকার ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় সড়ক অবরোধ করে খাদ্যসামগ্রীর দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।

খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন গিয়ে খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধ লোকজন সড়ক থেকে সরে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সদরের আউলিয়াপুর ইউনিয়নের শতাধিক নারী-পুরুষ ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় সড়কে অবস্থান নেন। তাঁরা সড়কে বাঁশ ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। এ সময় কয়েকজন যুবক বিক্ষোভকারীদের সামাজিক দূরত্ব মেনে বিক্ষোভ করার নির্দেশনা দেন। তখন বিক্ষোভকারীরা নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর সড়কে বসে পড়েন।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইউএনও ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। এ সময় লোকজন খাদ্যসামগ্রীর জন্য বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

দিনমজুর রাজেশ চন্দ্র রায় (৪৫) বলেন, এই এলাকায় বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। সবাই দিন এনে দিন খান। করোনা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে এখন সবকিছু বন্ধ। তাই ১৫ দিন ধরে এলাকার কয়েক শ মানুষ কর্মহীন। ঘরে যা ছিল, সব খাবার শেষ। এই এলাকার লোকজন যে কাজ করেন, তা এখন বন্ধ। বেশির ভাগ মানুষ কষ্ট করে চলছেন। এলাকার বেশির ভাগ লোককে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়নি। ফলে লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে সড়কে নেমে আসেন।

কৃষিশ্রমিক আবদুল জলিল (৩৯) বলেন, ‘করোনার কারণে ঘরে আটকে আছি। ঘরের খাবার শেষ হয়ে গেছে। কাজে যাওয়ার উপায় নাই। খুব কষ্টে দিন কাটছে। ত্রাণ দেওয়ার কথা বলে জনপ্রতিনিধিরা আমাদের কাছে নাম–ঠিকানা নিয়ে গেলেও এখনো কোনো খাদ্যসহায়তা পাইনি।’

এলাকার যুবক মো. শাহীন বলেন, তিনি এসে দেখতে পেলেন, লোকজন জড়ো হচ্ছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানলেন, তাঁরা ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নিতে এসেছেন। এ কথা শুনে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়টি মনে আসে তাঁর। পরে কয়েকজন মিলে বিক্ষোভে আসা লোকজনকে করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব মেনে বিক্ষোভ করার পরামর্শ দেন। সঙ্গে সঙ্গে সবাই তা মেনে নিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে বিক্ষোভ করেন।

ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের তরুণ আবদুল বারেক বলেন, ‘করোনা থেকে বাঁচতে হলে মানুষে মানুষে দূরত্ব রেখে চলতে হবে। এটা টেলিভিশনে দেখেছি। তাই ত্রাণের জন্য বিক্ষোভেও মানুষে মানুষে দূরত্ব রাখা হয়েছিল।’

বিক্ষোভের বিষয়ে আউলিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম দাবি করেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা ইউনিয়নের ১ হাজার ৫৮৪ জনের একটি তালিকা করে তৈরি করেছি। প্রতিদিনই ত্রাণ পেয়ে বিতরণ করে যাচ্ছি। এসব লোককে কেউ হয়তো উসকে দিয়ে রাস্তায় নামিয়েছেন।’

ইউএনও আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ওই এলাকায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির বাইরেও কর্মহীন অসহায় ও দুস্থ ৪০০ পরিবারকে সরকারি খাদ্যসামগ্রী সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এরপরও কেউ না পেলে তাঁরা তাঁদের খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। ওই এলাকার লোকজন তাদের সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগ করেননি। এলাকায় যাঁরা সহায়তা পাওয়ার যোগ্য, তাঁদের একটি তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা যে সামাজিক দূরত্ব মেনে বিক্ষোভ করেছেন, তা দেখে ভালো লেগেছে।