সিলেটে করোনা রোগীর সেবা দেবে বেসরকারি হাসপাতাল

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে যেখানে হাসপাতালগুলো সেবা দিতে তটস্থ, সেখানে সিলেটে সমন্বিত সেবার উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে এসেছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সংগঠন সিলেট বেসরকারি হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশন। আক্রান্ত রোগীদের সেবায় নগরীর দুটি বেসরকারি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখাসহ পাঁচটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি।

আজ শনিবার সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সংগঠনের উদ্যোগে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সমন্বয়ে বেসরকারি হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশন এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় সংগঠনটি সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বেসরকারি হাসপাতালে সেবা দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছিল।
আজকের সভার সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে সিলেটে পরিস্থিতি বিবেচনায় দুটি বড় বেসরকারি হাসপাতাল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রস্তুত থাকবে। রোগীদের জন্য ১০টি ‘হটলাইন’ নম্বর খোলা হবে এবং সেখান থেকে ফোনে পরামর্শ দেওয়া হবে। তিনটি অ্যাম্বুলেন্স রোগীদের বহন করার জন্য রাখা হবে। সব বেসরকারি হাসপাতালে ‘ফ্লু কর্নার’ খুলে চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণে রোগীর মৃত্যু হলে একটি নির্ধারিত পিকআপ ভ্যানের ব্যবস্থা, মানিক পীর কবরস্থানে দাফন ও জানাজার ব্যবস্থা করবে সিটি করপোরেশন।

সংগঠন সূত্র জানায়, সিলেটে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে শুধু শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে (সদর হাসপাতাল) সরকারিভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া উপজেলা কমপ্লেক্সগুলোতে আইসোলেশন সেন্টার খোলা হয়েছে। করোনাভাইরাসের বিস্তার অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে—এমন আশঙ্কা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার সিলেটের প্রথম বেসরকারি হাসপাতাল নগরীর দরগাহ গেট এলাকার নুরজাহান হাসপাতালে অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সভা হয়। এ সভার পর সরকারি স্বাস্থ্যসেবা দপ্তরগুলো ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বিত আরেকটি সভা হয়েছে।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাসিম আহমদের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবারের সভায় সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএমএ সিলেটের সদস্যসচিব আজিজুর রহমান, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পার্ক ভিউ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইবনে সিনা হাসপাতাল, মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল, ওয়েসিস হাসপাতাল ও আল-হারামাইন হাসপাতালের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রথম সভার ধারাবাহিকতায় আজ দ্বিতীয় দফার সভায় পাঁচটি সিদ্ধান্ত নিয়ে একমত হন সবাই। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুটি বেসরকারি হাসপাতালকে প্রাথমিকভাবে করোনা রোগীর জন্য প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, সিলেট নগরীতে দুটি শাখার মাধ্যমে পরিচালিত একটি বেসরকারি হাসপাতাল পুরোটাই করোনা রোগীর সেবায় উন্মুক্ত করা হবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্বিতীয় পর্যায়ে একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি ইউনিট করোনা রোগীর সেবার জন্য দেওয়া হবে।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাসিম আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবা দেওয়ার বিষয়ে আমরা প্রাথমিকভাবে দুটি হাসপাতাল নির্ধারণ করে রেখেছি। এই দুটি হাসপাতালের মধ্যে পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রথম পর্যায়ে একটিকে সেবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে। বেসরকারি হাসপাতালে সেবার জন্য সিটি করপোরেশন একটি অ্যাম্বুলেন্স, বিএমএ দুটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সহযোগিতা করবে। আর অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে চিকিৎসকসহ অন্যান্য সেবা দেওয়া হবে।’ এ উদ্যোগ ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে জানিয়ে নাসিম আহমদ আরও বলেন, ‘সিলেটে আমাদের উদ্যোগটি যদি এগিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে সারা দেশের মধ্যে প্রথম বেসরকারি হাসপাতালের উদ্যোগ হবে এটি।’

বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীর সেবায় একটি অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সহায়তাও সর্বাত্মকভাবে সিটি করপোরেশন দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি হাসপাতালের সেবায় সহায়তার পাশাপাশি সিলেটে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত সরকারি হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের কাজেও সহায়তা করছে সিটি করপোরেশন। সেখানে নতুন করে নয়টি ভেন্টিলেশন সংযুক্ত করা হচ্ছে। এ কাজেও সহায়তা করা হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের মতো বেসরকারি হাসপাতালের সেবায়ও একই সহায়তা থাকবে।